জাতীয়

তালিকায় সক্ষম সংস্থা কম

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন দেওয়ার জন্য যে ৬৮টি দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাকে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে তার ৪২টিই নতুন। এই সংস্থাগুলো এর আগে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করেনি। নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম যোগ্যতা—গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার অভিজ্ঞতাও অনেক সংস্থার নেই।

ইসির প্রাথমিক তালিকায় গত সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত ছিল এমন পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা ২৬।

এর মধ্যে ১৬টি সংস্থা ঢাকার বাইরের।

Image

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রাথমিক তালিকায় থাকা সংস্থাগুলোর বিষয়ে আপত্তি থাকলে তা গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে ইসির নজরে আনা যাবে। আপত্তিগুলো নিয়ে শুনানি শেষে চূড়ান্ত নিবন্ধন দেওয়া হবে।

কালের কণ্ঠ’র প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, নতুন যে পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়েছে সেগুলোর কয়েকটির প্রধানের সামাজিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন আছে।

একাধিক সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও আছে।নির্বাচন কমিশনের তালিকার ৬৮টি সংস্থার মধ্যে সরেজমিনে গিয়ে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার ৩৫টি সংস্থার অফিস, কার্যক্রম ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হয়। এসব সংস্থার মধ্যে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা ও যোগ্যতা নেই এমন সংস্থার সংখ্যা ২০। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে ১১টির সংস্থার প্রধানদের।

নানা ধরনের অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত চারটি সংস্থার প্রধানরা। এর মধ্যে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে দুটি সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে।আর্থিক সংকটে দুটির কার্যক্রমও বন্ধ আছে। তিনটির ঠিকানায় গিয়ে অফিস খুঁজে পাওয়া যায়নি। একই জেলায় স্বামী ও স্ত্রী দুজনের দুই সংস্থাও কমিশনের তালিকায় স্থান পেয়েছে।

সেখানে গিয়ে পাওয়া যায় হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশের দপ্তর সম্পাদক মাহামুদুল হাসানকে। তিনি জানান, তাঁরা হাফেজ্জী হুজুরের অনুসারী হলেও তাঁর রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন। হাফেজ্জী হুজুরের আদর্শ অনুসরণ করে সংস্থাটি পরিচালিত হচ্ছে।

মাহামুদুল হাসানের কাছ থেকে জানা গেল, হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটির প্রধান মো. মিকাইল করিম একটি ওষুধ কম্পানির ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার)। সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চত্বরে অবস্থিত মসজিদের ইমাম। তাঁদের ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবকের একটি তালিকা আছে।

ইসিতে নিবন্ধন পাওয়ার শর্ত—গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আপনারা কী কাজ করেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ইব্রাহিম খলিল মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা এখনো কোনো কাজ করিনি। নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ার পর এসব কাজ করব।’

ইসির প্রাথমিক তালিকার ১০ নম্বরে থাকা পাবনার আজমপুর শ্রমজীবী উন্নয়ন সংস্থার (আসাস) বিরুদ্ধে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলার বাঁশেরবাদা এলাকার খোকড়া গ্রামের এই সংস্থা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে সেচ্ছাসেবী উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন পায় ২০০১ সালে। এর নির্বাহী পরিচালক আবু হানিফের বিরুদ্ধে গাভী পালন প্রকল্পের নামে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে প্রতিকার পেতে উপজেলার দিয়ার সাহাপুর এলাকার একজন ভুক্তভোগী মো. খোকন আলী পাবনার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।

পাবনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাশেদুল কবীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ওই অভিযোগ বিষয়ে আমাদের তদন্ত করতে বলা হয় এবং আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তদন্তে প্রতারণার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।’

আবু হানিফও অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘অনেকের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি।’ নিবন্ধনের জন্য মনোনীত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করেছি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই এবার নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পেতে যাচ্ছি।’

তালিকায় দ্বিতীয় নম্বরে আছে সেবা সোশ্যাল ফাউন্ডেশন। লক্ষ্মীপুরের এই সংস্থার প্রধান জসিম উদ্দিন রিপন পাঁচ-ছয় বছর ধরে সৌদি আরবে আছেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন পেতে হাজীরহাটের যে ঠিকানা তিনি ব্যবহার করেছেন, সেখানে সেবা সোশ্যাল ফাউন্ডেশনের কোনো কার্যালয় নেই। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে সটকে পড়েছেন তিনি। স্থানীয় লোকজন তাঁকে বিএনপির সমর্থক হিসেবে চেনে। তাঁর বাড়ি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজীরহাট ইউনিয়নের চর জাঙ্গালিয়া গ্রামের মিয়াপাড়ায়।

ওই গ্রামের ইউপি সদস্য হাসান মাহমুদ আপেল বলেন, জসিম উদ্দিন রিপন কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবে রয়েছেন। এলাকায় থাকাকালে তিনি ব্যাংক, এনজিও ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। অন্তত ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাঁর কাছে টাকা পায়। এলাকায় তিনি প্রতারক হিসেবে পরিচিত। পাওনাদাররা তাঁকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

জসিম উদ্দিন রিপনের ভগ্নিপতি ইলিয়াস আহমেদ বলেন, ‘রিপন সৌদি আরবে থাকেন। তাঁর সঙ্গে আমাদের কারো সম্পর্ক নেই।’

নির্বাচন কমিশনের তালিকার ৩৪ নম্বরে থাকা লক্ষ্মীপুরের আরেক প্রতিষ্ঠান জেন্ডার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির (জেমস) চেয়ারম্যান মাহাবুব মোহাম্মদ আলী ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘আমরা আগে আবেদন করেছি। তখন মাহাবুব মোহাম্মদ আলী জেমসের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর আবুল মোবারক ভূঁইয়া ওই পদে রয়েছেন।’

তালিকার ৩৩ নম্বরে রয়েছে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার ক্রিয়েটিভ সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিএসডিসি) নামের একটি সংস্থা। সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. শওকত আলীর দরগ্রাম বাজারে এস আলী ট্রেডার্স নামের একটি দোকান আছে। মূলত তিনি চিনি, চাল, ডাল ও তেল জাতীয় খাদ্যদ্রব্য পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করেন।

শওকত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সিএসডিসি সম্পর্কে আমি বিশেষ কিছু জানি না। সব কাজ করেন নির্বাহী পরিচালক এমদাদুল হক মুকুল। সংস্থার অফিসে নির্বাহী পরিচালক এবং একজন পিয়ন ছাড়া আর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই।’

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক এমদাদুল হক মুকুল জানান, তাঁদের সংস্থা বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করেছে। সর্বশেষ মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করলেও বর্তমানে কোনো তহবিল না থাকায় সংস্থার কার্যক্রম নেই। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তাঁদের সংস্থা আগেও কাজ করেছে। নিবন্ধন পেলে কর্মী সংগ্রহ করা হবে।

তালিকার ৩৯ ও ৫০ নম্বরে রয়েছে রাজবাড়ীর দুটি সংস্থা। ৩৯ নম্বরে আছে রাজবাড়ী উন্নয়ন সংস্থা (রাস) এবং ৫০ নম্বরে আছে সমন্বিত নারী উন্নয়ন সংস্থা (এসএনইউএস)। রাসের নির্বাহী পরিচালক লুৎফর রহমান লাবু। আর এসএনইউএসের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান লাবুর সহধর্মিণী নাছিম আরা নাজমা।

স্থানীয় লোকজন জানায়, রাস একসময় ব্র্যাকের কয়েকটি শিশুশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করত। বর্তমানে রাজবাড়ী পৌর এলাকায় বর্জ্য নিষ্কাশন, কয়েকটি প্রি-প্রাইমারি স্কুল পরিচালনার কাজ করছে। আর এসএনইউএসের কার্যক্রম ও জনবল নেই বললেই চলে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক আব্দুস শুকুর রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাণিবহ ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি।

তালিকার ১৫ নম্বরে রয়েছে যশোরের সমাজ উন্নয়ন প্রায়াস। তালিকায় এই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি। শুধু লেখা রয়েছে মো. সিরাজুল ইসলাম, যশোর সদর। যশোরের কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত এনজিও কর্মকর্তারাও এই সংস্থা বা সিরাজুল ইসলামের কোনো সন্ধান জানাতে পারেননি।

তালিকার ৪৬ নম্বরে রয়েছে জামালপুরের সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডিও)। নির্বাচন কমিশন সংস্থাটির ঠিকানা জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের রাঙামাটিয়া গ্রামে জানালেও সেখানে এর কোনো কার্যালয় পাওয়া যায়নি। সংস্থাটির সভাপতি মো. শফিউল আলম এবং নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম সরকারকেও সেখানে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় লোকজন জানায়, রফিকুল ইসলাম সরকার স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। একই ইউনিয়নের জামালপুর-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে ও ইউনিয়ন পরিষদের কাছেই জনৈক আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে বসবাস করেন এবং সেখানে তাঁর সংস্থার একটি সাইনবোর্ড আছে।

স্থানীয় লোকজন আরো জানায়, একসময় সংস্থাটি ভালোই চলছিল। কয়েক বছর ধরে এর তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। পরে শরিফপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সাইনবোর্ড অনেক পুরনো, একদিকে হেলে পড়ে আছে। সংস্থার নাম-পরিচিতিও প্রায় মুছে গেছে।

মো. রফিকুল ইসলাম সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমার সংস্থাটি খুব শিগগির আমার গ্রামের বাড়ি রাঙামাটিয়ায় স্থানান্তর করা হবে। আপাতত শরিফপুরে ভাড়া বাসায় আছি। এর আগে অনেক কাজ করেছি। বর্তমানে হাতে কোনো কাজ নেই। নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছি। কাজ করার জন্য জনবল নিয়োগসহ সব ধরনের সক্ষমতা আমার আছে।’

তালিকার ২৭ নম্বরে রয়েছে রাজশাহীর স্বাস্থ্য শিক্ষা সেবা ফাউন্ডেশন (সেফ)। রাজশাহী মহানগরে সংস্থাটির কোনো কার্যক্রম নেই। নির্বাচন কমিশনে যে ঠিকানা দেওয়া আছে, সেখানে গিয়েও সেফের কোনো কার্যালয় পাওয়া যায়নি।

তবে ওই ঠিকানার একটি বাসায় সংস্থাটির প্রধান রুপন কুমার দত্ত সপরিবারে ভাড়া থাকেন। রুপন রাজশাহী মহানগর তাঁতী লীগের সহসভাপতি। বর্তমানে নগরীর আলুপট্টি এলাকায় একটি ফার্মেসি খুলে ওষুধের ব্যবসা করছেন। অবসরপ্রাপ্ত একজন সচিব এই সংস্থার উপদেষ্টা। তিনি রুপনের মামা। রুপনের স্ত্রী শায়লা জানান, স্বামী রুপনের সংস্থায় তিনিও কাজ করেন। তাঁদের সংস্থার কার্যক্রম রাজশাহী মহানগরীর বাইরে তানোর ও মোহনপুর উপজেলায়। এ কারণে নগরীতে কোনো অফিস নেই।

নির্বাচন কমিশন গত ১৮ জানুয়ারি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধনের জন্য যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল তাতে বলা আছে, গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যেসব সংস্থা কাজ করে আসছে সেসব সংস্থা নিবন্ধন পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে। সংস্থার প্রধানদের নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ হতে হবে। ২০১৮ সালে নিবন্ধন পাওয়া সংস্থাগুলোর মধ্যে যেসব সংস্থা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গত ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্যান্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেনি সেসব সংস্থা এবার নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য হবে না।

এবার ২১১টি সংস্থা পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিল। প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ দেওয়া হয় ১১৬টিকে। পরে বাদ দেওয়া হয় আরো ২৭টিকে। প্রকাশিত প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত তালিকায় ৬৮টি সংস্থাকে রাখা হয়েছে।

আগের আপত্তি ও ইসির অবস্থান

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ৩১৯টি সংস্থা পর্যবেক্ষক হতে আবেদন করে। কমিশন প্রথমে ১৩৮টি নির্বাচন সংস্থার প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করে। তালিকার ২০টি সংস্থার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছিল আওয়ামী লীগ। চারটির বিরুদ্ধে আপত্তি জানায় বিএনপি।

কিন্তু নির্বাচন কমিশন আপত্তি আমলে না নিয়ে বলেছিল, সংস্থার প্রধান সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত থাকলে সেই সংস্থা নিবন্ধন পাবে না।

দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ ধরনের আপত্তি ও অনুরোধ নির্বাচন কমিশন আমলে নেয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দাবি করে চারটি সংস্থার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ আপত্তি জানায়। এগুলো হলো ডেমোক্রেসি ওয়াচ, খান ফাউন্ডেশন, লাইট হাউস ও বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ। এসব সংস্থার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত তালিকায় ডেমোক্রেসি ওয়াচ ছিল। 

নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নির্বাচন কমিশনের হওয়া উচিত নয়

নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনপ্রক্রিয়া ও সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন নিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থাটি ন্যায়সংগত মনে হয় না। কারণ কোনো পর্যবেক্ষক সংস্থা নির্বাচনের ত্রুটি নিয়ে প্রতিবেদন দিলে কমিশন যদি তা পছন্দ না করে তাহলে সেই সংস্থার নিবন্ধন চাইলে বাতিল করতে পারে তারা। এ কারণে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নির্বাচন কমিশন হওয়া উচিত নয়।

রফিকুল ইসলাম বলেন, এনজিওগুলোর কার্যক্রম চলে তহবিলপ্রাপ্তি, বিশেষ করে বিদেশি বা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া তহবিলের ওপর ভিত্তি করে। এনজিওগুলোই মূলত নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন নেয়। গত কয়েকটি নির্বাচনে তহবিল না পাওয়ায় সংস্থাগুলোর নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আগ্রহে ভাটা পড়ে। এবারও যারা নিবন্ধন পেতে আগ্রহী তাদের অনেকের কার্যক্রম নির্ভর করবে তহবিলপ্রাপ্তির ওপর।

সংস্থাগুলোর যোগ্যতা বিষয়ে তিনি বলেন, মূলত কাগজে-কলমে যেসব সংস্থা যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে সেসব সংস্থা নিবন্ধন পায়। আবার বাস্তবে যোগ্য অনেক সংস্থা কাগজে-কলমে ঠিক না থাকার বা ঠিক করার কৌশল জানা না থাকার কারণে নিবন্ধন থেকে বঞ্চিত হয়।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker