কিশোরগঞ্জ

হোসেনপুরে ঝুঁকিপূর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

হোসেনপুরের জিনারি ইউনিয়নের টেকাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে,পাকা ভবনটির প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে। ছাদের অনেক জায়গায় আস্তরণ পড়ে গিয়ে ভেতরের রড বেরিয়ে গেছে। পেছন দিক থেকে ভবনটির চিত্র যেন আরও নড়বড়ে। সেঁতসেতে আর আগাছায় জঙ্গল হয়ে আছে। বিদ্যালয়ের কোন সীমানা প্রাচীরও নেই। বিভিন্ন সময় গরু-ছাগল চড়ে বেড়ায়। নিরাপত্তা ঝুঁকিও রয়েছে। সুপেয় পানি এবং ওয়াশরুমেরও কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কষ্ট নানামুখি।

বিদ্যালয়টি খুব বেশি দিনের পুরনো নয়। প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৯৭৮ সালে। এর পাকা করণ হয়েছে ১৯৯৫ সালে। অত্যন্ত নিম্নমানের কাজের কারণে ভবনটি নির্মাণের মাত্র ১৪ বছরের মাথায় এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের বরাবরে এ নিয়ে বহুবার লেখালেখি করার পরও ভবনটি অপসারণ করে নতুন ভবন নির্মাণের কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা পাশের টিনশেড ঘরে পালাক্রমে ক্লাশ করছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সবাই উদ্বেগে দিন পার করছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ আকন্দ জানান, তিনি এই বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন তিন বছর হলো। এখানে এসেই তিনি দেখতে পাচ্ছেন, ২০০৯ সাল থেকেই থানা শিক্ষা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে যেসব কর্মকর্তা বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন, সবাই পরিদর্শন খাতায় বিদ্যালয় ভবনটিকে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য লিখেছেন। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলেও লিখেছেন। প্রধান শিক্ষক গতবছর ১০ মার্চ উপজেলা প্রকৌশলী বরাবরে নতুন ভবনের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন। অনুলিপি দিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। টিনশেড ভবনে ক্লাশ করানো হচ্ছে।

আরো পড়ুন: জামালপুরে দুই ভুয়া সাংবাদিক আটক

তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়ে তারা চারজন শিক্ষক আছেন। বিদ্যালয়ের নড়বড়ে অবস্থার কারণে শিক্ষার্থী আছে ৯৫ জন। গতবছর ছিল ১১০ জন। বিদ্যালয়ে পরিত্যক্ত ভবন ছাড়াও দুটি সাধারণ মানের টিনশেড ঘর আছে। সেখানেই শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। তবে এসসঙ্গে সবার ক্লাশ নেয়া যায় না। পালাক্রমে পড়াতে হয়। পাকা ভবনে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ থাকলেও তাতে শিক্ষকরা বসতে পারেন না। ঝুঁকি নিয়ে অফিসের আসবাবপত্রসহ অন্যান্য মালামাল রাখা হয়েছে।

হোসেনপুরের উপ-সহকারী প্রকৌশলি আব্দুল হক জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য তাদের অফিস থেকে এ ধরনের বিদ্যালয়ের চিত্রসহ বিবরণ অনলাইনে দেয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই মোতাবেক টেকাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তথ্য চিত্রও আরও তিন বছর আগেই অনলাইনে দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় যখনই সিদ্ধান্ত নেবে, তখনই নতুন ভবনের নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

আরো পড়ুন: রানা প্লাজার সোহেল রানার জামিন, বাধা নেই মুক্তিতে

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আসাদুজ্জামান বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত স্বীকার করে জানান, তার কার্যালয় থেকে গতবছর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বিদ্যালয়টির বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। এরপরও এলাকার সংসদ সদস্যের মাধ্যমে একটি ডিও চিঠি দেয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সাঈদ হাসানের বাবা ফারুক মিয়া এবং প্রথম শ্রেণির ছাত্রী উম্মে হাবিবার বাবা বাদল মিয়ার মত অন্যান্য অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারাও দ্রুত পরিত্যক্ত বিদ্যালয় ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। টিনশেড ঘরে ক্লাশ করতে ছেলেমেয়েদের কষ্ট হয়। আগামী বর্ষা মৌসুমে ক্লাশ করানো আরও কষ্ট হবে বলে তারা মনে করছেন।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker