‘আমাগোর সব স্বপ্ন শ্যাষ হইয়া গেল ভাই। এই শহরে আমাদের সুখ আর সইল না। ব্যাংকের লোন নিয়া ঈদের জন্য আরো বেশি নতুন কালেকশন ওঠানো হইছিল…আগুনে সব শ্যাষ! আমাগোর ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ কী হইবো…।’
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর গুলিস্তানে সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের সামনে বসে এভাবে বিলাপ করছিলেন আমেনা। পাশে বসে আরেক মধ্যবয়সী নারী তাসলিমাও আহাজারি করছিলেন সর্বস্ব হারানোর বেদনায়।
সম্পর্কে দুজন জা। তাঁদের দুজনের স্বামীরই বঙ্গবাজার এলাকায় অ্যানেক্স টাওয়ারে শার্ট-প্যান্টসহ তৈরি পোশাক ও শাড়ির আলাদা দুটি দোকান ছিল। গতকাল ভোরে লাগা আগুনে পুড়ে গেছে দোকান দুটি।
দুজনের ভাষ্য, পাঁচ লাখ টাকার মালপত্র উদ্ধার করতে পারলেও প্রায় ৩০ লাখ টাকার মালপত্র পুড়ে গেছে।
আমেনা-তাসলিমার মতো অনেক নারীকে গতকাল দুর্ঘটনাস্থলে হতবিহ্বল অবস্থায় ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে কারো স্বামী, কারো বাবা, কারো ভাই বা অন্য কোনো স্বজনের দোকান পুড়ে গেছে আগুনে।
আমেনা বিলাপ করতে করতে জানান, প্রায় ১৩ বছর আগে স্বামী আর দেবর তাঁদের লক্ষ্মীপুরের রায়পুরা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখেই চলছিল তাঁদের সংসার।
তিনি বলেন, ‘এক আগুন আমাগো পথের ফকির বানাইয়া দিল ভাই। জীবনের সব সম্বল ছিল দোকানে (আল্লাহর দান ফ্যাশন হাউস)। তিন ছেলেমেয়ের স্কুল-কলেজের পড়াশোনার খরচসহ বাড়িতেও এখান থেকে টাকা পাঠানো হতো। এহন ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখতেছি। কিভাবে ঘুরে দাঁড়াব, একমাত্র আল্লাহই জানেন।’
তাসলিমা জানান, ফাহিম ফ্যাশন নামের দোকানটি স্বামী ফারুক হোসেন ১৮ বছর ধরে পরিচালনা করে আসছিলেন। কয়েকজন কর্মচারীও ছিল। এখন সবাই নিঃস্ব। সকালে আগুনের খবর শুনে মার্কেটে এসে দেখেন সব পুড়ে ছাই। অল্প কিছু মালপত্র উদ্ধার করতে পারলেও কিছু চুরি হয়ে গেছে। এই আগুন তাঁদের জীবনে বিভীষিকা নিয়ে এসেছে বলে জানান দুই জা।