জাতীয়

সৌদি আরবে দুর্ঘটনায় নিহত ১৩ বাংলাদেশির পরিচয়

সৌদি আরবের আসির প্রদেশে বাস দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ বাংলাদেশি মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ঘটনায় ১৭ বাংলাদেশিকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

নিহত ১৩ বাংলাদেশি হলেন- নোয়াখালীর সেনবাগের মো. শরিয়ত উল্লাহর ছেলে শহিদুল ইসলাম, কুমিল্লার মুরাদনগরের আব্দুল আওয়ালের ছেলে মামুন মিয়া, নোয়াখালীর মোহাম্মদ হেলাল, লক্ষ্মীপুরের সবুজ হোসাইন, কুমিল্লার মুরাদনগরের রাসেল মোল্লা, কক্সবাজারের মহেশখালীর মো:আসিফ, গাজীপুরের টঙ্গীর আব্দুল লতিফের ছেলে মো. ইমাম হোসাইন রনি, চাঁদপুরের কালু মিয়ার ছেলে রুক মিয়া, কক্সবাজারের মহেশখালীর সিফাত উল্লাহ, কুমিল্লার দেবীদ্বারের গিয়াস হামিদ, যশোরের কাওসার মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ নাজমুল, যশোর ইস্কান্দারের ছেলে রনি ও কক্সবাজারের মোহাম্মদ হোসেন।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন জানিয়েছেন, সৌদি আরবে যে বাস দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই বাসে ৪৭ জন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন ৩৫ জন। বাস দুর্ঘটনায় ১৮ বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৭ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এছাড়া বাসে ভিন্নদেশি ১২ জন যাত্রীদের মধ্যে ৫ জনকে মৃত এবং ৭ জনকে আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সোমবার (২৭ মার্চ) সৌদি আরবের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় আসির প্রদেশে যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় ২২ ওমরাহ যাত্রী নিহত হয়েছেন। ওমরাহ যাত্রী বহনকারী বাসটি একটি সেতুতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। একপর্যায়ে বাসটি উল্টে আগুন ধরে যায়। নিহতরা ওমরাহ পালন করতে মক্কা যাচ্ছিলেন। হতাহত বাংলাদেশিরা ওমরাহ করার জন্য সৌদি আরবে গেছেন না কি সৌদি আরবে তাঁরা থাকতেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আট বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীর মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে।

আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু 

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, রুবা আল হিজাজ ট্রান্সপোর্ট কম্পানির একটি বাস বিভিন্ন দেশের ওমরাহযাত্রীদের নিয়ে পবিত্র মক্কা নগরীতে যাওয়ার সময় ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনাস্থল আসির প্রদেশের আকাবাত শার নামে আকাবাঁকা সড়কটি পর্বত কেটে বানানো। ওই সড়কে অনেক টানেল ও সেতু আছে। প্রাথমিক খবরে পাওয়া গেছে, ব্রেক সিস্টেমে ত্রুটির কারণে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাড়িকে ধাক্কা দেয়। এরপর সেই গাড়িকে নিয়ে বাস সামনের দিকে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। ওই পরিস্থিতিতে বাসযাত্রীরা বাস থেকে বের হতে পারেননি। ঘটনাস্থলেই অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়।

মরদেহ শনাক্ত করা কঠিন

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, জেদ্দা থেকে প্রায় সাড়ে ছয়’শ কিলোমিটার দূরে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের প্রথম সচিব (শ্রম) ও আইনি সহকারীর সমন্বয়ে একটি টিম ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের প্রতিনিধিকে জানিয়েছে, আগুনে পুড়ে ও শরীর ক্ষতবিক্ষত হওয়ায় নিহতদের নাগরিকত্ব শনাক্ত করা কঠিন।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সৌদিতে দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের পরিবারগুলোকে আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছে। মরদেহগুলো দ্রুত ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

দুর্ঘটনা সম্পর্কে যা বলছে সৌদি গণমাধ্যম

সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন আল আখবারিয়া জানিয়েছে, মক্কায় ওমরাহযাত্রীদের আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত বাস একটি সেতুর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা খেলে তাতে আগুন ধরে যায়। বাসটি খামিস মুশাইত শহর থেকে রওনা হয়েছিল।

স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাসটির ব্রেকে সমস্যা হয়েছিল। নিয়ন্ত্রণ হারানো বাসটি সেতুর শেষ প্রান্তে রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে বাসটি উল্টে যায় এবং তাতে আগুন ধরে যায়।

বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, আকাবাত শার ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক। এটি ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। পর্বত কেটে বানানো ওই সড়কে ১১টি টানেল ও ৩২টি সেতু রয়েছে।

আল আখবারিয়ার প্রতিবেদনে নিহতদের ‘বিভিন্ন দেশের নাগরিক’ বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কোন কোন দেশের নাগরিক, তা নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। এর আগে ২০১৬ সালে মদিনা ও মক্কার সংযোগকারী একটি মহাসড়কে বাস উল্টে ১৯ জন নিহত এবং ২২ জন আহত হয়েছিলেন।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker