রাজনীতি

মিরপুরে জামায়াতের বৈঠক থেকে আটকদের মধ্যে আছেন দুই সরকারি কর্মকর্তাও!

রাজধানীর মিরপুরে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের একটি বৈঠক থেকে যে ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে দুইজন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বলে জানা গেছে। ২৬ মার্চ নাশকতা করতে এই বৈঠক আয়োজন করা হয়েছে দাবি করে পুলিশ আটক সবার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দিয়েছে। একই সঙ্গে উদ্ধার দেখিয়েছে কয়েকটি ককটেল বোমা।

সরকারি কর্মকর্তা দাবি করা দুইজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল ব্রাঞ্চের যুগ্ম ব্যবস্থাপক মো. আবু মাসুম সিদ্দিকী এবং অপরজন একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম (এটুআই) প্রকল্পে কর্মরত আব্দুল্লাহ আল ফাহিম। এরমধ্যে ফাহিমের বাবা মো. গোলাম মোর্শেদ যশোরের চৌগাছা উপজেলা জামায়াতের বর্তমান আমির বলে জানা গেছে।

পুলিশ বলছে, ওই দুইজন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সত্যিই চাকরি করেন কিনা তা জানতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া সরকারি চাকরি করে কীভাবে জামায়াতের বৈঠকে তারা যোগ দিলেন এবিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকেও তদন্ত চলছে।

এদিকে জামায়াতের গ্রেপ্তার ৫৮ জনকে আদালতে তুলে দশজনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত দুইদিন করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, শনিবার রাত নয়টায় মিরপুর ১ নম্বরের ক্যাপিটাল মার্কেটের ষষ্ঠ তলায় ফোর-সি ক্লাসি নামের একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের একটি গোপন বৈঠক চলছে; এমন খবরে পুলিশ ভবনটি ঘিরে ফেলে। বৈঠক থেকে ৫৮ জনকে আটক করা হয়। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় নাশকতার উদ্দেশ্য করণীয় নির্ধারণে সেখানে একত্রিত হয়েছিলেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে কয়েকটি ককটেল উদ্ধার করা হয়।

জামায়াতের গোপনীয় বৈঠক থেকে আব্দুল্লাহ আল ফাহিম নামে একজনকে আটক করা হলে তিনি নিজেকে আইসিটি ডিভিশনের অধীন একসেস টু ইনফরমেশন (a2i) প্রকল্পে কর্মরত বলে দাবি করেন।

এ তথ্য নিশ্চিত হতে পুলিশ ফাহিমের নিজ বাড়ির ঠিকানা যশোরের চৌগাছায় যোগাযোগ করে। পরে জানা যায়, ফাহিমের বাবার নাম গোলাম মোর্শেদ। তিনি পেশায় আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ও চৌগাছা উপজেলা জামায়াতের আমির। তার নামে (গোলাম মোর্শেদ) চৌগাছা থানায় তিনটি মামলা রয়েছে। যা চৌগাছা থানা পুলিশও নিশ্চিত করে।

যশোর জেলা পুলিশ জানিয়েছে, মিরপুরে জামায়াতের গোপনীয় মিটিং থেকে আটক আব্দুল্লাহ আল ফাহিমের পরিবার জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, অভিযানে গ্রেপ্তার মো. আবু মাসুম সিদ্দিকী নিজেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল ব্রাঞ্চের যুগ্ম ব্যবস্থাপক দাবি করেন। এর স্বপক্ষে বেশকিছু প্রমাণও তিনি দেখিয়েছেন। তার বাবার নাম মৃত মোহাম্মদ আলী। আবু মাসুম সিদ্দিকীর গ্রামের বাড়ি শেরপুরের শ্রীবর্দী থানার পূর্ব ঝিনিয়া গ্রামে।

আবু মাসুম সিদ্দিকীর বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকা টাইমস। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকে তো কত কর্মকর্তা চাকরি করেন। সবার বিষয়ে তো খোঁজ রাখা সম্ভব না। সোমবার খোঁজ নিয়ে জানাতে পারব।’

আর আব্দুল্লাহ আল ফাহিমের সম্পর্কে জানতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, আমরা এবিষয়ে জানি না, খোঁজ নিতে হবে।

এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হয় ফাহিমের বাবা গোলাম মোর্শেদের সঙ্গে। তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না দাবি করেন। বলেন, ‘এবিষয়ে আমার জানা নেই।’ ফাহিম কোথায় চাকরি করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় কোনো একটা প্রতিষ্ঠান করে।’ এরপর মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের এক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রেপ্তারদের মধ্যে দুইজন সরকারি চাকরি করেন জানার পর সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়। পরে সবার বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশনা আসে।’

দারুস সালাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ আমিনুল বাশার বলেন, ‘আমরা গ্রেপ্তার ৫৮ জনকে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠিয়েছিলাম। এরমধ্যে দশজনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। আদালত দুই দিন করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন।’

দুইজন সরকারি চাকরি করেন তাদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তাদের বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। যাচাই-বাছাই ও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

মামলার এজাহারে বলা হয়, ঘটনার দিন জামায়াতের গ্রেপ্তার ৫৮ জন ছাড়াও পালিয়ে যাওয়া আরও ৩০ থেকে ৪০ জন মিলে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এই বৈঠকের আয়োজন করেছিল। পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে আটটি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker