আন্তর্জাতিক

ধসে পড়লো যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক

৪০ বছরের পুরোনো যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যর্থতার ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘটনাটি ঘটে গেল। 

স্থানীয় সময় শুক্রবার (১০ মার্চ) সকালে ‘সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক’ (এসভিবি) বন্ধ ঘোষণা করে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। খবর: সিএনএন।

এখন ইউএস ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এফডিআইসি) ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেবে। পরে এফডিআইসি প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগকারী এই ব্যাংকটির সম্পত্তি বিক্রি করে সেই অর্থ গ্রাহকদের মাঝে বিতরণ করবে।

স্টার্টআপের জন্য ঋণ দেওয়া মার্কিন ব্যাংক এসভিবি বুধবার (৮ মার্চ) এক ঘোষণা দেয়, ব্যালান্স শিট বা স্থিতিপত্র শক্তিশালী করতে তারা ২২৫ কোটি ডলার সমমূল্যের শেয়ার বিক্রি করবে। কিন্তু এই এক ঘোষণাই যে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

এ ঘোষণায় ব্যাংকের গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরদিনই ব্যাংকটির শেয়ারের দর ৬০ শতাংশ কমে যায়। গত বৃহস্পতিবার আমানতকারীরা তুলে নেন চার হাজার ২০০ কোটি ডলার। 

২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর এই প্রথম কোনো পশ্চিমা ব্যাংক এভাবে বন্ধ হয়ে গেল। ২০০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘ওয়াশিংটন মিউচুয়াল ব্যাংক’ বন্ধের ঘটনাটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হয়। আর এটি তাদের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ধস। 

পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো এর কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের ধারাবাহিকভাবে নীতি সুদহার বৃদ্ধিকে দায়ী করছে। এতদিন মূলত মূল্যস্ফীতির মধ্যেই এর প্রভাব সীমিত ছিল।

গত বছরের শুরুতেই ফেডের নীতি সুদহার ছিল শূন্যের কাছাকাছি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেনজনিত মূল্যস্ফীতির প্রভাব মোকাবিলায় গত এক বছরে ফেড আটবার নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেছে। ফলে বাণিজ্যিক ঋণের সুদহারও বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে সে দেশের বন্ডের সুদহার বেড়েছে। ঋণ ও বন্ডের সুদহার বেড়ে যাওয়ার সম্মিলিত ফল হলো, বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি এড়িয়ে নিরাপদ জায়গায় বিনিয়োগ করার সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়া। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা ভাবছেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্যিক প্রকল্পে বিনিয়োগ না করে, বরং বন্ডে বিনিয়োগ করাই ভালো, আরামে সুদ খাওয়া যাবে।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো। বিনিয়োগকারীরা স্টার্টআপে বিনিয়োগ কমিয়ে দেওয়ায় সিলিকন ভ্যালির এ স্টার্টআপগুলো সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে রক্ষিত আমানত ভেঙে খেতে শুরু করে। তাতে সিলিকন ভ্যালির ব্যাংকের আমানতে টান পড়ে। 

এ বাস্তবতায় এসভিবি গত বুধবার ২১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১০০ কোটি ডলারের বন্ড বিক্রি করে, যার সিংহভাগই ছিল মার্কিন ট্রেজারি বন্ড। এর সুদহার ছিল ১ দশমিক ৯ শতাংশ, অথচ ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার প্রায় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। ফলে বন্ড বিক্রি মুখ থুবড়ে পড়ে। তাদের ক্ষতি হয় ১৮০ কোটি ডলার।

এরপর সেই ক্ষতি পোষাতে বৃহস্পতিবার এসভিবি ২২৫ কোটি ডলার সমমূল্যের ইকুইটি বিক্রির ঘোষণা দেয়। বলা যায়, এটা ছিল কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার মতো। হুড়মুড়িয়ে আমানত তুলে নিতে শুরু করেন আমানতকারীরা। পতন হয় ৪০ বছরের পুরোনো এই ব্যাংকের।

এ ঘটনায় ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংকট নিয়ে গবেষণা করে গত বছর অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বেন এস বার্নানকে বলেছেন, স্রেফ গুজবের কারণে যে ব্যাংক ধসে পড়তে পারে, তার বড় নজির এসভিবি। বিপুলসংখ্যক সঞ্চয়কারী যখন একসঙ্গে সঞ্চয় ভাঙার জন্য ব্যাংকে যান, তখন গুজব কার্যত বাস্তব রূপ লাভের কাছাকাছি চলে যায়। এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়াতে সরকার উদ্ধারকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে। সেটা হলো সরকার আমানতের বিমা দিয়ে ব্যাংকের জন্য আপৎকালীন ব্যাংকার হিসেবে আবির্ভূত হওয়া। এসভিবির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঠিক সে কাজটি করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker