জামালপুরে শাশুড়ির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাঁচ নার্সকে পেটানোর ঘটনায় মুচলেকা দিলেন নূরে আলম জিকু নামে এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা। তিনি শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং ওই বৃদ্ধার জামাতা।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জামালপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনে এক সভায় এ মুচলেকা দেন তিনি।
এর আগে রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নূরে আলম জিকু লোকজন নিয়ে নার্সদের কক্ষে ঢুকে অন্তঃসত্ত্বা নার্স শারমিন ইসলামসহ শিখা খানম, আশরাফুন নাহার, মারুফা আক্তার ও লাকি খাতুনকে মারধর করেন।
মারধরের ঘটনায় নার্সরা প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এসময় হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা চলছিল। সভায় নার্সদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে নার্সরা কাজে ফেরেন।
জানা গেছে, শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ে শহরের চন্দ্রা এলাকার বাসিন্দা জেসমিন আক্তার (৫০) হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে রাতেই ছাড়পত্র না নিয়ে স্বজনরা রোগীকে বাড়ি নিয়ে যান। রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) অবস্থার অবনতি হলে ফের তাকে হাসপাতালে আনা হয় এবং অতিরিক্ত রক্তচাপের কারণে হাসপাতালের টয়লেটে গিয়ে তিনি পড়ে যান। ওই সময় সহকারী অধ্যাপক ডা. শামছুল হক টুকু, ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইসিজি করে নিশ্চিত হন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বজনরা নার্সদের কক্ষের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেন। একপর্যায়ে রোগীর জামাতা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নূরে আলম জিকু লোকজন নিয়ে নার্সদের কক্ষের ভেতরে ঢুকে তাদের মারধর করেন।
নার্স শারমিন ইসলাম জানান, তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। অথচ কোনো কথা না শুনে তিনিসহ আরও চার নার্সকে মারধর করেন ওই নেতা।
তিনি বলেন, রোগীর মৃত্যুতে হাসপাতালের কোনো অবহেলা ছিল না। অন্যায়ভাবে আমাদের মারধর করায় কর্মবিরতি পালন করি। পরে কর্তৃপক্ষের বিচারের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। আজ সবার সম্মুখে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন এবং মুচলেকা দিয়েছেন।
এ ঘটনায় শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক নূরে আলম জিকু দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝি থেকে ঘটেছে। বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মুহা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ওই ঘটনায় নূরে আলম সবার সামনে আজ ক্ষমা চেয়েছেন। এছাড়া মুচলেকা দিয়েছেন যে তিনি পরবর্তীতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর কোনোদিন করবেন না। এখন হাসপাতালের পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে।