ফুলবাড়ী

জরাজীর্ণ সেতু দিয়ে চলাচলে ভোগান্তি এলাকাবাসীর দেখার যেন কেউ নেই

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সদর থেকে সামান্য দূরত্বে রয়েছে উপজেলার অন্যতম দর্শনীয়স্থান ফুলসাগর লেক। এই ফুলসাগর লেকের দক্ষিণ পাড় ঘেঁষেই এলাকার গরীব অসহায় মানুষের জন্য গড়ে ওঠেছে আবাসন। আবাসনের গা ঘেঁষে বয়ে গেছে ফুলবাড়ীর ছড়া নামের নালা। আবাসনের ১৮০ ঘর বাসিন্দাসহ আশপাশের ৩ টি গ্রামের ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের পারাপারের জন্য নালার উপড় নির্মাণ করা হয় ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু ও পাকা সংযোগ সড়ক। বর্তমানে সেতুটি কাঠের হলেও দৈনন্দিন জীবন-জীবিকার প্রয়োজন মিটাতে ছুটেচলা গ্রামবাসীকে গভীর নালাটি পারাপারে এই সেতুটির উপর নির্ভর করতে হয় এলাকাবাসী।
উপজেলা সদর থেকে অল্প দূরত্বের এই সেতুটি অত্র অঞ্চলের মানুষের কাছে গুরত্বপূর্ণ হলেও সেতুটির পোক্ত সংস্কার কিংবা নতুন পাকা সেতু নির্মাণ করতে জনপ্রতিধিদের দ্বায়িত্বহীনতার অভিযোগ স্থানীয়দের। বর্তমান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সেতু ভেঙ্গে পড়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করে বালাটারি গ্রামের বাসিন্দা আয়নাল হক, আবুল হোসেন ও নুর ইসলাম বলেন, বিগত ইউপি নির্বাচনের সময় তিনি নির্বাচনী সভা করতে এই সেতু দিয়ে পার হওয়ার সময় সেতু ভেঙ্গে মোটরসাইকেলসহ নিচে পরে যান। পরে আমরা স্থানীয়রা ওনাকে উদ্ধার করি। এসময় তার সাথে থাকা ছকমল নামের এক ব্যক্তির হাতও ভেঙ্গে যায়। তিনি তখন ওয়াদা করেছিলেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে এখানে সেতুর ব্যবস্থা করবেন। চেয়ারম্যান ছাড়াও অন্যান্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও সেতুটি পোক্ত ভাবে সংস্কার কিংবা নতুন করে নির্মাণে এগিয়ে আসেননি বলেও এলাকাবাসী জানান। সরকারি মোটা অংকের টাকা ব্যয়ে আবাসন প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও পাকা সংযোগ সড়ক নির্মানের পরেও সেতুটির বিষয়ে কেন এতো অবহেলা? এ প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
মঙ্গলবার বিকালে সেতু স্থলে গিয়ে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ সেতুটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। সেতুর কিছু কিছু জায়গায় পাঠাতনের তক্তা ভেঙ্গে পরে ফাঁকা হয়ে গেছে। সেতুটির খুটিগুলোর এতোই নড়বড়ে অবস্থা যে সেতুর উপর উঠলেই সেতুটি দুলতে থাকে। তবুও ঝুঁকি নিয়ে এই নড়বড়ে সেতু দিয়েই নারী,শিশু বৃদ্ধসহ অনেককেই পারাপার হতে দেখা গেছে।
এলাকাবাসী বলেন, আবাসন প্রকল্পের বাস্তবায়নের পরে আমাদের এখানে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। কাঠদিয়ে সেতুটি নির্মাণ করায় প্রতি বছর এর মেরামত করতে হয়। আমরা এলাকাবাসীরা চাঁদা তুলেও কয়েকবার এটির মেরামত করেছি। বর্তমানে সেতুটি মেরামতেরও অযোগ্য। তবুও আমরা কোন উপায় না পেয়ে এই সেতু দিয়েই পারাপার হচ্ছি। আর পারাপার হতে গিয়ে প্রতিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। কয়েকদিন আগে সন্ধ্যা বালা নামের ৬২ বছরের এক বৃদ্ধা সেতু থেকে পরে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছিল। প্রায়ই সেতু দিয়ে মালামাল পারাপাড়ের সময় দুর্ঘটনা ঘটে। এভাবে চলতে থাকলে যে কোন সময় সেতুর কারণে প্রাণহানির ঘটতে পারে বলে আশংকা অনেকের।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পারাপারে চরম ভোগান্তির শিকার এলাকাবাসী তাদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির বিষয় বিবেচনা করে সংশ্লিষ্টদের নিকট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানান।
সেতু দিয়ে পারাপারে জনভোগান্তির সত্যতা স্বীকার করে সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ হারুন বলেন, আগে যাতায়তের জন্য এখানে বাঁশের চাটাইয়ের তৈরি সেতু ছিল। আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরে উপজেলা পরিষদের সহযোগিতায় এখানে কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের পরে বিভিন্নভাবে কয়েক দফায় সেতুর মেরামত করা হয়েছে।  বর্তমানে এটি আর মেরামত যোগ্য নয়। আর পাকা সেতু নির্মাণের সামর্থ্য ইউনিয়ন পরিষদের নেই।তাই জনগনের ভোগান্তি লাঘবে এখানে পাকা সেতুর নির্মানের জন্য উর্ধবতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন দাস বলেন, সরেজমিনে সেতুটি পরিদর্শন পূর্বক জনসাধারণের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker