জাতীয়

মেট্রোরেলে চড়তে ঢাকার বাইরে থেকেও আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা

নগরবাসীর বহুল প্রত্যাশিত ও প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল এখন বাস্তবতা। ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিন নিয়ে এসেছে মেট্রোরেল। উদ্বোধনের পরদিনই এই উড়াল ট্রেনের প্রথম যাত্রী হতে স্টেশনগুলোতে মানুষের ভিড় লেগেছে। এমনকি মেট্রোরেলে চড়তে অনেকে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকেও আসছেন।

বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। পৌষের কনকনে শীত উপেক্ষা করে অনেকে এসেছেন সপরিবারে। কেউ কেউ ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে এসেছেন। স্টেশন ঘুরে অন্তত পাঁচ শতাধিক যাত্রীর উপস্থিতি চোখে পড়েছে।

এদিন কাওরান বাজার থেকে সকাল সাড়ে ছয়টায় আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনে উপস্থিত হয়েছেন মিঠু ও তার দুই সহকর্মী। তিনজনই সরকারি কর্মকর্তা। প্রথম দিন মেট্রোরেলে চড়তে বুধবারই তারা মাদারীপুর থেকে ঢাকায় চলে আসেন।

তারা জাগো নিউজকে জানান, মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে ভোর সাড়ে ছয়টায় কাওরান বাজার থেকে আগারগাঁও এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। মেট্রোরেলে আগারগাঁও থেকে উত্তরা দিয়াবাড়ী যাবেন, সেখান থেকে আবার ফিরবেন আগারগাঁও।

মিঠু বলেন, সকালে স্টেশনে এসে দেখি যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। ১০ মিনিট পর পর ট্রেন এলেও সবাইকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আবার কেউ কেউ পরে এসেও লাইনের সামনে ঢুকে যাচ্ছেন। কাউকে কাউকে লাইন ছাড়াই আগেভাগে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। উদ্বোধনের পর প্রথম দিন যাত্রী বেশি হবে, সেটি চিন্তা করেই হয়তো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করা হয়নি।

তিনি বলেন, ভারত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মেট্রোরেলেও ভ্রমণ করেছি। সেসব দেশে সুশঙ্খলভাবে যাত্রী ওঠানামা করানো হয়। ভাড়াও অনেক কম। প্রতিবেশী অন্য দেশগুলোর চেয়ে ঢাকার মেট্রোরেলে তুলনামূলক ভাড়া বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভাড়া সাশ্রয়ী হলে সর্বসাধারণের জন্য উপকার হয়।

সকাল থেকে দীর্ঘ লাইনে টানা প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন বেসরকারি চাকরিজীবী হায়দার আলী। মেট্রোরেল উদ্বোধন হওয়ায় প্রথম দিন ভ্রমণ করতে রাজধানীর ইস্কাটন থেকে ভোর ছয়টায় স্ত্রী-সন্তানসহ বের হন তিনি। সকাল সাতটায় লাইনে এসে দাঁড়ালেও কখন ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন তা অনিশ্চিত। এ নিয়ে তিনি কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

হায়দার আলী জাগো নিউজকে বলেন, অনেক উৎসাহ-আনন্দ দিয়ে পরিবারসহ মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে আগারগাঁও এসেছি। স্টেশনে যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। কখন ট্রেন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবো বলতে পারছি না। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ালেও এক ধরনের আনন্দ কাজ করছে। দেশে প্রথমবারের মতো চালু হওয়া মেট্রোরেলের পরিবারসহ চড়বো, এটা ভিন্ন এক উপলব্ধি।

তিনি বলেন, অন্যান্য দেশে মেট্রোরেলের ভাড়া অনেক সাশ্রয়ী হয়ে থাকে। শহরে বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে দুই টাকা চল্লিশ পয়সা, অথচ মেট্রোরেলের ভাড়া কিলোমিটারে ৫ টাকা করা হয়েছে। যেহেতু এটি সরকারি গণপরিবহন ফলে ভাড়াটাও সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখা উচিত।

রাজবাড়ী থেকে পরিবার নিয়ে মেট্রোরেলে চড়তে ঢাকায় এসেছেন রহিম মীর। শ্যামলীতে এক আত্মীয়র বাসায় উঠেছেন। সকাল সাতটায় আগারগাঁও স্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়ান।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, পরিবার নিয়ে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে ঢাকায় এসেছি। প্রথম দিন ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবো, সেটা ভেবে আমরা অনেক আনন্দ অনুভব করছি। তবে যেহেতু প্রথমবার ঢাকায় মেট্রোরেল চালু হয়েছে, তাই আগামী সপ্তাহখানেক মানুষের বাড়তি চাপ থাকবে। অনেকে অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও ভ্রমণ করতে ঢাকায় আসবেন। একটা সময় ধীরে ধীরে এটি স্বাভাবিক হবে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ১০ মিনিট থেকে আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশন থেকে যাত্রী প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। উত্তরা স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলো ১০ মিনিট পর পর আগারগাঁও স্টেশনে পৌঁছাচ্ছে। নির্ধারিত সংখ্যক যাত্রী ভেতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে। স্টেশনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker