অনন্ত, মেহেদি পাতা দেখেছ নিশ্চয়?
উপরে সবুজ, ভেতরে রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত-
নিজেকে আজকাল বড় বেশি মেহেদি পাতার মতো, মনে হয় কেন?
আবুল হোসেন খোকনের অনন্ত -মিথিলা কবিতার এই পঙক্তিগুলি হয়তো অনেকেরই জানা! পল্লী গাঁয়ের পরতে পরতে উঠোন কোনে বেড়ে উঠা মেহেদি গাছটি চোখে পড়ে সতত। বাড়ির শোভাবর্ধক এ গাছটি যেমন এসেছে উক্ত কবিতার পঙক্তিতে অনুভবের বারান্দায়, তেমনই রয়েছে এর জানা-অজানা নানাবিধ ব্যবহার।মেহেদি না দিলে কি আর উৎসবের আনন্দে পূর্ণতা পায়! বাঙালি উৎসব আমেজে মেহেদি যেন এক অবিচ্ছেদ্য উপাদান নখ বা হাতের রুপ লাবন্য ফুটাতে।বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানে মেহেদির ব্যবহার না থাকলে তু নিরামিষ বর-কনের সাজুগুজু।
মেহেদি ছোট ঝোপ জাতীয় গাছ, উচ্চতায় ২-৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। শাখা থেকে কাটাযুক্ত উপশাখা বের হয়। ফুল অসংখ্য, ছোট,সাদা বা গোলাপী বর্ণের হয়। ফল ছোট ক্যাপসূল ও গ্লোবুজ। পাতা ডিম্বাকৃতি, বিপরীত, ছোট ও ২০৩ সেন্টি মিটার লম্বা হয়।মেহেদি শুধু রাঙাতে নয় রোগমুক্তিতেও এর ব্যবহার আশ্চর্য রকম।
লোকমান হাকিমের লতাপাতা চিকিৎসা কিম্বা গাছ-গাছড়া টোটকা থেকে মেহেদি গাছের অসিম বীরত্বের কথা জানা যায় মানব জনপ্রাণীর রোগ মুক্তিতে।
বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বমতে পাওয়া যায়,
★ মেন্দি পাতার রস ও সর্ষে তৈল ঘাড়ে মালিশ করলে ঘাড়ের ব্যথা কমে যায়। একমনকি গরুর ঘাড়ের ব্যাথাও কমে।
★ এ পাতা বেটে নখে ও চুলে লাগালে নখ ও চুল ভাল থাকে।
★ পায়ের তলায় পাতা বাটার প্রলেপ দিলে চোখে গুটি ওঠে না।
★ পাতা বেটে পুরানো একজিমায় লাগলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
★ পাতা বেটে হাতে লাগালে লাল হয়। অনেকে পাকা চুলেও ব্যবহার করেন।
এছাড়াও ইউনানী চিকিৎসকদের মতে, চুল উঠে যাওয়া বা পাকায় ১টি হরিতকি ও ১০/১২ গ্রাম মেহেদি পাতা একটু থেতো করে ২৫০ মলি গ্রাম পানিতে সেদ্ধ করে ৬০-৭০ মিলি থাকতে নামিয়ে ছেকে ঠান্ডা হলে মাথায় লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়-
★ শ্বেতপ্রদরে ২৫ গ্রাম মেহেদি পাতা সেদ্ধ করে সেই পানিতে উত্তরস্তি ( ডুশ দেওয়া) দিলে সাদাস্রাব ও অভ্যন্তরের চুলকানি প্রশমিত হয়। স্থানভ্রস্ট জরায়ুর ক্ষেত্রেও উপযুক্ত পদ্ধতি প্রয়োগ করলে অসুবিধা কমে যায়।
★শুক্রমেহ রোগে মেহেদি পাতার রস এক চা চামচ দিনে দুবার পানিতে বা দুধের সাথে একটু চিনি মিশিয়ে খেলে এক সপ্তাহের মধ্যে উপকার পাওয়া যায়।
★মুখ গলার ক্ষতে পাতা সেদ্ধ পানি মুখে খানিক্ষন রাখলে সেরে যায়।
★ গ্রীষ্মকালে ঘেমে গিয়ে গায়ে দুর্গন্ধ হলে মেহেদী পাতা ও বেনামূল সেদ্ধ পানিতে গোসল করলে উপকার পাবেন।
★ কানে পুজ হলে এ পাতার রস ২ ফোটা করে কানে দিলে ৪/৫ দিনে পুজ পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
কবিরাজ সিরাজুল ইসলাম বলেন,মেহেদি গাছের গুণাগুণ বলে অল্প সময়ে শেষ করা সম্ভব নয়। এর একটা বিশেষ গুণ হলো-আগের দিনে নবাব-বাদশাহদের অনিদ্রা রোগ হলে মেহেদি ফুলের বালিশে ঘুমানোর পরামর্শ দেয়া হত। এতে আছে লাইলাকের গন্ধ। গন্ধটি পার্থিব সস্তায় সমৃদ্ধ।
কিশোরগঞ্জের আলহাজ্ব আঃ কদ্দুছ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এর প্রভাষক ডা: প্রণব কান্তি সাহা বলেন,মেহেদি পাতা দিয়ে হাত রাঙানো হয় শুধু তা নয়! এর রয়েছে চমৎকার ঔষধি গুণাবলি, হয়তো সেটা সবার জানা থাকেনা, প্রাচীনপন্থী বৈদ্য সম্প্রদায়ের মতে শরীরে হিমোগ্লোবিন সঠিক পরিমানে আছে কি না জানার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। মেহেদী পাতা বাটা হাতের তালুতে লাগালে রংটা লালচে আভা দিলে ভাল, না হলে হিমোগ্লেবিন কম আছে বলে ধারণা করা হয়।
সতর্কীকরণ: সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ব্যতিত উপরে উল্লেখিত কোন তথ্যের বাস্তবিক প্রয়োগ কাম্য নয়। ঔষধি উদ্ভিদের অপরিপক্ক ব্যবহার স্বাস্থ্য হানিকর।