সরিষাবাড়ী

রশি টেনে নদী পারাপার: স্বাধীনতার ৪ যুগেও হয়নি একটি ব্রিজ

নৌকায় দাড়িয়ে রশি টেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হতে হয় কমলমতি শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষকে। যেন ভোগান্তির শেষ নেই। স্বাধীনতার ৪যুগ অতিবাহিত হলেও দূর্ভোগ লাগবে এখানে হয়নি একটি ব্রিজ।

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বালিয়া দিয়ার হাট খোলা খেয়া ঘাটে এমন চিত্র দেখা যায়।

সরেজমিনের গিয়ে জানা যায়, ঝিনাই নদীর জন্মলগ্ন থেকেই বালিয়া দিয়ার হাট খোলা খেয়া ঘাটটি চালু হয়। নদীর এপার-ওপার ও পার্শ্ববর্তী গ্রাম মিলে ৭-৮ গ্রামের মানুষের সংক্ষিপ্ত রাস্তা হিসেবে এই খেয়া ঘাট ব্যবহার করেন। নদীর পশ্চিম পাশে বালিয়া গ্রামে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিনিউটি ক্লিনিক, মাদ্রাসা, প্রতিবন্ধী স্কুল, দিয়ার হাট-বাজারসহ বড় আকারের কয়েকটি ইট ভাটা। প্রতিদিন প্রায় ৫ থেকে ৬’শতাধিক মানুষ নৌকা যোগে পারাপার হতে হয়। পারাপার হতে হয় অর্ধশতাধিক শিশু শিক্ষার্থীসহ নানা পেশাজীবী মানুষকে। বর্ষার সময় নদীর ব্যাপক হারে পানি বেড়ে যায়। তখন সাধারন মানুষকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে নদীর এক পার থেকে অন্য পাড়ে যেতে হয়। একটি ব্রিজ দুইপাড়ের ভোগান্তি কমিয়ে যোগাযোগ সহজ করে দিতে পারে স্থানীয়দের।

কমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা বলেন- নৌকা পার হয়ে স্কুলে যেতে ভয় করে। কখন যেন নৌকা উল্টে যায়। বর্ষার সময় স্কুলে ঠিকমত যাওয়া যায় না।

ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান পুন্যসহ স্থানীয়রা বলেন- একটি ব্রিজ হাজার মানুষের চরম দুর্ভোগ কমিয়ে দিতে পারে। এলাকাবাসীর পক্ষ আমরা সবাই এখানে একটি ব্রিজ স্থাপনের দাবি জানাই।

ঘাটের মাঝি মাদব রবি দাস বলেন, তার পিতা নারায়ণ রবি দাস অনেক বছর এখানে নৌকা চালিয়েছেন। এখন ৮-১০বছর যাবত সে নৌকা চালান। নৌকা চালিয়ে প্রতিদিন কয়েক শতাধিক মানুষকে পারাপার করেন। মাঝে মধ্য তার অনুপস্থিতিতে যে যার মত নৌকার রশি টেনে পারাপার হয়। অনেক সময় পানির স্রোতে নৌকা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। আরো বলেন প্রতিবছর এই ঘাটে তিনি হালখাতা করে পারাপার হওয়া মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলেন।

বালিয়া কমিনিউটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য কর্মী বলেন, এই ক্লিনিকের সেবা নেওয়া অধিকাংশ মানুষ নদীর ঐ পাড়ে থাকে। নদী পার হয়ে বৃদ্ধ মানুষ ও গর্ভবতী মায়েরা সেবা নিতে আসেনা।

বালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, নদীর ঐপাড় থেকে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী নদীর পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসে। ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য এখানে একটি ব্রিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক জানান, খেয়া ঘাটটি তার বসতবাড়ি অতি নিকটে। তার ওয়ার্ডের ৪টি গ্রামের মধ্যে একটি গ্রাম নদীর উপারে। আর সেখানেই রয়েছে স্কুল, কমিনিউটি ক্লিনিক, হাট, মাদ্রাসা ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। শিক্ষা গ্রহণসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহনে ভোগান্তি পোহাতে হয় জনসাধারণ ব্যক্তিদের। এখানে জরুরি ভিত্তিতে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা দাবী করেন সরকারের কাছে।

ডোয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক স্বপন বলেন, ঝিনাই নদীর কারনে ডোয়াইল ইউনিয়নটা যেন অবিভক্ত হয়ে আছে। পরিষদের সেবা গ্রহনের জন্য সাধারণ মানুষকে টাংগাইলের ধনবাড়ী উপজেলা হয়ে আসতে হয়। ডোয়াইল বাসীর দুর্ভোগ লাগবের জন্য ব্রিজটি অতি জরুরি।

এ-ব্যাপারে জামালপুরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী সায়েদুজ্জামান সাদেক মুঠোফোনে বলেন, ইতিমধ্যে অনেক ব্রিজের জন্য আবেদন করা হয়েছে উপর মহলে। যদি সেই জায়গাটি আমাদের প্রজেক্ট ভুক্ত হয় তাহলে কাজটি করানো সম্ভব হবে। না হলে প্রজেক্ট ভুক্ত করে কাজ করতে হবে।

এ-বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপমা ফারিসা বলেন- খেয়া ঘাটের বিষয়টি জানতে পারলাম। এলজিইডি কর্মকর্তার সাথে কথা বলে দ্রুত পর্যবেক্ষণ করা হবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker