ময়মনসিংহ

ফুলপুরে কবরস্থানে বস্তাবন্দি লাশ মরিয়মের মায়ের!

দীর্ঘ ২৭ দিন নিখোঁজ থাকার পর মায়ের লাশের সন্ধানে আজ সকালে ফুলপুর থানায় আসেন মরিয়ম মান্নান। লাশের সাথে থাকা সুরতহাল তথ্য অনুযায়ী নিশ্চিত করেন লাশটি তাঁর মায়ের। এ সময় লাশের সাথে বিভিন্ন আলামত দেখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এ লাশটি আমার মায়ের। ’ নিখোঁজ হওয়া ওই নারীর নাম রহিমা খাতুন (৫২)।

জানা যায়, দ্বিতীয় স্বামী বিল্লাল হাওলাদারকে নিয়ে খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা খানাবাড়িতে থাকতেন রহিমা। গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টায় বাসার নিচে টিউবওয়েলের পানি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন মরিয়মের মা। এ সময় রহিমা খাতুনের পায়ের জুতা, গায়ের ওড়না, পানির পাত্র থাকলেও ছিলেন না তিনি।

এদিকে গত ১০ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে বওলা ইউনিয়নের এক কবরস্থান সংলগ্ন ঝোপে বস্তাবন্দি (৫২) এক নারীর লাশ উদ্ধার করে ফুলপুর থানার পুলিশ। দুপুরে এ নারীর লাশ উদ্ধার করা হলেও তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ সময় নিহত নারীর পরনে ছিল গোলাপি রঙের সালোয়ার, গায়ে সুতি ছাপা গোলাপি, কালো বেগুনি, কমলা রঙের কামিজ। গলায় গোলাপি রঙের ওড়না পেঁচানো ছিল।

ফুলপুর থানার পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডটি বেশ কয়েক দিন আগে হওয়ায় এবং এ লাশের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতে না পারায় লাশ শনাক্ত করা যায়নি। উক্ত অজ্ঞাতনামা লাশ পরিচয় পাওয়ার জন্য স্থানীয় সাংবাদিকসহ বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়াতে সংবাদ প্রচার করে। ফুলপুর থানার পুলিশ লাশের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লাগানোর ব্যবস্থা করে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের কোনো তথ্য ১৪ দিনেও পাওয়া যায়নি।

আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে মরিয়ম মান্নানসহ পরিবারের ছয় সদস্য এলে লাশের সাথে থাকা আলামত দেখান আলামত সংগ্রহকারী ভ্যানচালক জামাল উদ্দিন। মরিয়ম মান্নান মায়ের লম্বা চুলের বিবরণ শোনেন জামালের কাছ থেকে। তখন পরিবারের সবাই চিৎকার করে বলেন, এ লাশ আমাদের।

এ সময় মরিয়ম মান্নান, তার দুই বোনসহ সবাই জানান, লাশের সাথে ওড়না ও সালোয়ার মায়ের পরনে ছিল না। তাঁদের ধারণা, হত্যাকারীরা এসব আলামত নষ্ট করে, যাতে পরিচয় শনাক্ত করা না যায়। বাকি আলামত মা রহিমা খাতুনের বলে নিশ্চিত করেন দুই বোন ও পরিবারের সদস্যরা।

মরিয়ম মান্নান জানান, তিনি ঢাকা তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ছাত্রী। তারা ছয় ভাই-বোন। মা রহিমা খাতুন দ্বিতীয় স্বামী বিল্লাল হাওলাদারকে নিয়ে বসবাস করতেন। মেয়ে আদুরি খাতুন বলেন, ‘নিখোঁজের পর মাকে না পেয়ে ২৮ আগস্ট খুলনার দৌলতপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে অপহরণ মামলা করি। ’

জানা যায়, নিখোঁজ রহিমা খাতুনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশীদের জমিসংক্রান্ত বিরোধ চলছিল।

মা নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টির ব্যাপারে জানতে চাইলে মরিয়ম মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় আমরা এগিয়ে যাব। এ মুহূর্তে আদালতের মাধ্যমে বাকি কাজ সম্পন্ন করতে ফুলপুর থানার ওসির সাথে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’

ফুলপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি আদালতে জানানো হবে। রবিবার আদালতে এ বিষয়টি তুলে ধরা হবে। ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত করা হবে লাশটি মরিয়মের মায়ের কি না।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker