জাতীয়

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চ সার্ভিসে বাজছে বিদায়ঘণ্টা!

ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের (বিশেষ করে বরিশাল) ২০০ বছরের লঞ্চ সার্ভিসে বিদায়ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। রোটেশন করেও এই সার্ভিসকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রী আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়া ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে লঞ্চ সার্ভিসে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এমতাবস্থায় এই সার্ভিসটি বাঁচাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

পদ্মা সেতু চালু হওয়া পর প্রথমদিকে লঞ্চ সার্ভিস অব্যাহত থাকবে-এমনটাই আশা করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এই রুটে আশঙ্কাজনক হারে যাত্রী কমে গেছে। শুধু তাই নয়, লঞ্চের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি লঞ্চ মালিকদের রীতিমতো ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি কোম্পানি তাদের বেশির ভাগ লঞ্চ অন্য কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এমনকি অনেক কোম্পানি ক্রেতা না পাওয়ায় লঞ্চ কেটে লোহার দরে বিক্রি করছেন।

বরিশাল রুটের বিলাসবহুল লঞ্চ এমভি কীর্তনখোলা-১ নিয়মিত যাত্রী না পেয়ে ক্রমাগত লোকসান গুনে আসছিল। অবশেষে এই লঞ্চটি বিক্রির জন্য প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু লঞ্চ সার্ভিসের সার্বিক লোকসান পরিস্থিতির কারণে এটি কিনতে রাজি না হওয়ায় সবশেষ কেটে লোহার দরে বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু কীর্তনখোলাই নয়, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০টি লঞ্চ এভাবে কেটে বিক্রি করা হয়েছে।

মালিকদের বক্তব্য, রাউন্ডট্রিপে প্রতিবার লোকসান দিতে হচ্ছে ২ লাখ টাকারও ওপরে। তাই বাধ্য হয়েই এমনটা করতে হচ্ছে।

কুয়াকাটা-২ লঞ্চের মালিক আবুল কালাম খান বলেন, যাত্রীরা দক্ষিণাঞ্চলে ভ্রমণে এখন লঞ্চের চেয়ে বাসে যেতে বেশি আগ্রহী। তাই আমরা চরম যাত্রী সংকটে ভুগছি। এরমধ্যে যুক্ত হয়েছে জ্বালানি তেলের বাড়তি মূল্য। যার কারণে আমরা লঞ্চে যাত্রী পরিবহন পোষাতে পারছি না। এই অবস্থায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ এ খাতের সবাইকে লঞ্চ সার্ভিস বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে।

লঞ্চ সার্ভিস নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন নৌ যাত্রী পরিবহন সংস্থার প্রেসিডেন্ট মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, লঞ্চ ব্যবসায় এখন খুব মন্দা যাচ্ছে। আগে যেখানে আমরা খুব ভালো বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতাম, সেখানে এখন আমরা দিন আনি দিন খাই অবস্থা। আমাদের লঞ্চ সার্ভিসে লিস্টেড ৭০০ লঞ্চের মধ্যে ৬০০টির অবস্থাই খারাপ।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই কিন্তু আমরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি। যাত্রী না পাওয়ায় লঞ্চগুলো স্ক্র্যাপ হয়ে যাচ্ছে। অনেক মালিক ব্যাংকঋণ খেলাপি হয়ে গেছেন। সর্বোপরি আমরা এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে সরকারের সহযোগিতা চাই।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker