ব্রাহ্মণবাড়িয়া

সিপাকে হত্যার পর পানিতে ফেলে দেয় প্রেমিক বাইজিদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় আশিকা জাহান সিপা (১৬) নামের এক এসএসসি পরিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধারের পর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। তার মাথা গাছের সঙ্গে আঘাত করে হত্যা করে গৃহশিক্ষক ও প্রেমিক বাইজিদ সরকার (২৬)।

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক হুমায়ুন কবির এই তথ্য জানিয়েছেন। সিপা জেলা শহরের সরকারি মডেল গার্লস হাইস্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। সে সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামের শাহিন মিয়ার মেয়ে। তারা পরিবারসহ জেলা শহরের মুন্সেফপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। গত ২৮ আগস্ট দুপুর দেড়টার দিকে পৌর এলাকার মুন্সেফপাড়া বোর্ডিং মাঠ পুকুর থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক হুমায়ুন কবির জানান, বাইজিদ সরকার আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে ইতোমধ্যে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। গত শনিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক স্বাগত সৌম্যের কাছে বাইজিদ এই জবানবন্দি প্রদান করেন।

তিনি আরও জানান, বাইজিদ জবানবন্দিতে জানায় বাইজিদ সরকার মুন্সেফপাড়ায় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে টিউশনি করান। সিপাকেও তার বাসায় গিয়ে গত তিন বছর ধরে পড়াচ্ছিলেন বাইজিদ। ইতোমধ্যে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে বাইজিদ পাশের একটি বাড়িতে পড়াচ্ছিলেন। এ সময় সেই বাড়ি খালি থাকায় সে সিপাকে সেখানে আসতে বলেন। সিপা সেখানে যাওয়ার পর প্রতিবেশী একজন দেখে ফেলে। এনিয়ে আশপাশের বাড়িতে কানাঘুষা চলে। তাই সিপার আত্মসম্মানে লাগায় বিয়ের জন্যে বাইজিদকে চাপ দেয়। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়।

গত ২৭ আগস্ট দিনগত রাত দুইটার দিকে সিপার সঙ্গে বাইজিদের মুঠোফোনে কথা হয়। এ সময় সিপা আবারও বাইজিদকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে মধ্যরাতে সিপা কাউকে কিছু না বলে লুকিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। বের হওয়ার পর বোর্ডিং মাঠ পুকুর পাড়ে বাইজিদ ও সিপা মিলিত হয়। সেখানে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে বাইজিদ জানায়, সে সিপাকে বিয়ে করবে না। এই কথা শুনে সিপা ক্ষুব্ধ হলে বাইজিদ তার চুলের মুঠি ধরে পাশের গাছে মাথা আঘাত করে। এতে সিপা অচেতন হয়ে পড়লে তাকে পুকুরে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় বাইজিদ। রোববার দুপুরে বোর্ডিং মাঠ পুকুর থেকে সিপার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

উপপরিদর্শক হুমায়ুন কবির আরও জানান, এই ঘটনার পর সিপার পরিবারের লোকজন যখন তার খোঁজ করছিল, তখন তাদের সঙ্গে বাইজিদও সিপাকে খোঁজ করার অভিনয় করে৷ তারপরও সিপার পরিবারের সন্দেহ ছিল বাইজিদের ওপরই। মরদেহ উদ্ধারের পর বাইজিদকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। এই ঘটনায় সিপার বাবা আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় বাইজিদকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। এখন এই মামলা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker