কালের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে সিরাজগঞ্জের মৃৎশিল্পীরা।
একসময় মাটির তৈজসপত্রের অনেক কদর ছিলো। কিন্তু বর্তমানে প্লাস্টিক ও সিরামিকের ভিড়ে হারাতে বসেছে মাটির তৈজসপত্র। এখন আর মাটির তৈজসপত্র তেমন একটা চলেনা। বিশেষ করে করোনার কারনে সকল অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ শিল্পের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
ঈদ, পুজা, পার্বনে মৃৎশিল্পীরা তাদের হাতের তৈর তৈজসপত্র এসব অনুষ্ঠানে তুলতো। বর্তমানে এ সকল অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এগুলো আর বিক্রি হয় না। পুরুষ ও মহিলাদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় মাটি হয়ে ওঠে বিভিন্ন ধরণের সৌখিন সামগ্রী। আর সেগুলো রোদে শুকিয়ে রং তুলির আঁচড়ে তা ফুঁটিয়ে তোলা হতো। অনেক পুরুষ মাটির তৈরি তৈজসপত্র দুই ঝুঁপড়ি করে কাঁধে নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে তা হাঁক ডেকে বিক্রি করতো। বর্তমানে এটিও আর চোখে পড়ে না।
আধুনিকতায় বদলে গেছে সব কিছু প্লাস্টিক, সিরামিক, এ্যালুমিনিয়ামের জিনিসে বাজার দখল করে নিয়েছে। তাই এ শিল্পের সাথে জড়িতদের বর্তমানে চলছে চরম দুর্দিন। উল্লাপাড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতে টিকে রেখেছে এ শিল্প। বিশেষ করে চোখে পড়ে উপজেলার ঝিকিড়া, ঘোষগাঁতী, নেওয়ারগাছা ও পালপাড়াতে ।
এ সময় কথা হয় ঘোষগাঁতী পালপাড়া গ্রামের বিদ্যুত হোসেনের সাথে। তিনি বলেন,
দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে এই পেশার সাথে জড়িত আছি। আগে অনেক কিছু তৈরী করতাম কিন্তুু বর্তমানে শুধু তৈরি হয় হাড়ি, পাতিল, আর দইয়ের খুটি। আগে অনেক কিছুর চাহিদা থাকলেও এখন আর নেই। তাই এ পেশা টিকিয়ে রাখতে কষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বাজারে সকল পণ্যের দাম বৃদ্ধি হলেও বাড়েনি মাটির তৈরি তৈজসপত্রের দাম
পিপাসা রানী বলেন,
বর্তমানে বাজারে ১২০ টাকা মন কাঁঠ, ১০০ টাকা বস্তা কাঁঠের গুড়া,আর চড়া মুল্যে কিনতে হয় মাটি। তাই এ পেশা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না ।
অনেকে বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে বিভিন্ন পেশায় চলে গেছে। তবে সরকারি সহযোগীতা পেলে এ পেশা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন এ শিল্পের সাথে জড়িত মৃৎশিল্পীরা।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন বলেন,
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মান উন্নয়নের জন্য সরকার বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাস বেত শিল্প, মৃৎশিল্পী, জুতা মেরামত কারি (মুচি), নাপিত, কাঁচা পিতল প্রস্তুতকারী ও কামার শিল্পদের জন্য ১৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ এসেছে। খুব শিঘ্রই এদের তালিকা তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করা হবে।