শেরপুরের নালিতাবাড়ীর একটি সমতল বনভূমির জঙ্গল থেকে কাকের ডাকে শনাক্তের পর মাটি খুঁড়ে নাছিমা বেগম নামের এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তরা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
হত্যাকাণ্ডের ৫ দিন পর মরদেহ উদ্ধার এবং মরদেহ উদ্ধারের ১১ দিন পর চাঞ্চল্যকর তথ্যের পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুই আসামিকে।
গত (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকার বংশাল এলাকা থেকে নজরুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে উভয়ের জবানবন্দি গ্রহণকালে তারা দোষ স্বীকার করায় মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়।
পুলিশ জানায়, শনিবার (২০ আগস্ট) বিকেলে পূর্ব মানিককুড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন গ্রাম পুলিশ আমির আলীর স্ত্রী ও ৫ সন্তানের জননী নাছিমা বেগম (৩৫)।
এরপর মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) নাছিমার স্বামী নালিতাবাড়ী থানায় নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সকাল দশটার দিকে নাছিমার মাসহ স্বজনরা বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে থাকা বিশিগিরিপাড়া গ্রামে বন বিভাগের সমতল বনভূমির জঙ্গলে নাছিমার সন্ধান করছিলেন।
এসময় একদল কাক জঙ্গলে ডাকাডাকি করায় নাছিমার মা ঝোপের মাঝে গিয়ে গন্ধ ও মাছির উপস্থিতি টের পান। পরে আরো সামনে এগুলে মাটিতে পুঁতে রাখা লাশের দেহাবশেষ বেরিয়ে থাকায় হাতের চুরি ও ওড়না দেখে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন তিনি।
খবর পেয়ে থানা পুলিশ, সিআইডি, সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট ও র্যাব সদস্যরা গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত ও লাশ উদ্ধার করে।
এদিকে, সন্দেহভাজন হিসেবে একই সময়ে হেলিম মিয়া ওরফে ইলিমকে (৪০) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তবে সন্দেহভাজন অপর অপরাধী নজরুল ইসলাম (৩০) ততক্ষণে পালিয়ে যায়।
পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে, ২০ আগস্ট (শনিবার) বিকেলে ওই বাগানের পাশে থাকা নজরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে ৫০ টাকা ধার চান নাছিমা। এসময় ৫০ টাকা ধার দিলে নজরুলের স্ত্রী বাড়িতে না থাকায় নাছিমা তাকে শারীরিক সম্পর্কের কথা বলে বাগানে ডেকে নিয়ে যান। ঝোপের আড়ালে গিয়ে দু’জনে মিলে প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট শারীরিক সম্পর্ক করে বেড়িয়ে আসছিলেন।
এসময় সেখান দিয়ে আসতে থাকা হেলিম ওরফে ইলিম তাদের দেখে ফেলে বিষয়টি প্রকাশের ভয় দেখায়। একপর্যায়ে নাছিমাকে টেনে ঝোপে নিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সাথে থাকা অলঙ্কার খুলে নেওয়ার চেষ্টা করে হেলিম। এতে বাঁধা দিলে নাছিমার গলায় থাকা ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে ধরে এবং নজরুলকে টেনে ধরতে বলে হেলিম।
পরে উভয়ে মিলে দুইপাশে টেনে ধরলে নাছিমা শ্বাসরোধ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। এসময় হেলিম নাছিমার বুকে কয়েকটি লাথি দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর হেলিমের কথামতো নজরুল বাড়ি থেকে কোঁদাল নিয়ে প্রথমে একটি গর্ত করার চেষ্টা করে। হেলিম তা নিষেধ করে ঝোপের ভেতরে গিয়ে আরেকটি গর্ত করে নিজেই। এরপর নজরুল কাঁধে করে নাছিমাকে নিলে উভয়ে মিলে নাছিমাকে মাটিচাপা দেয়। এসময় নিহতের সাথে অলঙ্কার খুলে নেয় হেলিম।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তদন্তে নজরুলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঢাকার বংশাল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে উভয়ের জবানবন্দি গ্রহণকালে তারা দোষ স্বীকার করায় মঙ্গলবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.