কোনো নারী ও পুরুষের মধ্যে বিশেষ সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্মতি থাকতেই হবে, তারা বিবাহিত হোক বা না হোক – এক যুগান্তকারী রায়ে গত সপ্তাহে এ কথা বলেছেন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরালা রাজ্যের হাইকোর্ট।
যে মামলায় এই রায় দেওয়া হয়েছে – তার আবেদনকারী নারী বলেন, তিনি অসুস্থ থাকলেও তার স্বামী তাকে নিয়মিত বিশেষ সম্পর্কে বাধ্য করতেন।
কেরালা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি কাওসার এডাপ্পাগাথ এবং বিচারপতি এ মুহাম্মদ মুস্তাক তাদের রায়ে বলেন, স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া স্বামীর এই কর্মকাণ্ড বৈবাহিক ধর্ষণের পর্যায়ে পড়ে।
তারা রায়ে আরো বলেন, এই বৈবাহিক ধর্ষণ বিবাহবিচ্ছেদেরও ন্যায়সংগত কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণ, অর্থাৎ যেখানে ধর্ষিতা ও ধর্ষকের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক থাকে, সেটাকে কোনো অপরাধ বলে গণ্য করা হয় না।
কিন্তু কেরালা হাইকোর্ট তাদের রায়ে বলেছেন, এটাকে চরম নৃশংসতা বলে গণ্য করাই যায় – যার ভিত্তিতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনও মঞ্জুর করা সম্ভব।
কলকাতায় নারী অধিকার কর্মী ও অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষ মনে করেন, ভারতীয় উপমহাদেশের পটভূমিতে এই রায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ – কারণ এখানে বিশেষ সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্ত্রীর সম্মতিও যে জরুরি, সেই স্বীকৃতিটারই অভাব আছে।
তিনি বলেন, ‘এই বিশেষ মামলাটিতে স্ত্রী অভিযোগ করেছেন, ১২ বছর ধরে তিনি স্বামীর অন্যায় যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটাতে গিয়ে ক্লান্ত; কিন্তু এর বিরুদ্ধে দুবার পারিবারিক আদালতে গিয়েও তিনি কোনো প্রতিকার পাননি।’
মামলার বিবরণী উল্লেখ করে শাশ্বতী ঘোষ আরো বলেন, বিশেষ সম্পর্কে বাধ্য করার সময় তার স্বামী খেয়ালই করতেন না যে স্ত্রী অসুস্থ কি না।
‘এমনকি তার স্ত্রীর মা যেদিন মারা যান, সেদিনও তিনি তাকে বিশেষ সম্পর্কে বাধ্য করেছেন – নিজেদের মেয়ের সামনেও মিলিত হয়েছেন। এমন চরম নৃশংসতাও আইনের চোখে এত দিন অপরাধ ছিল না – এটাই আক্ষেপের।’
শাশ্বতী ঘোষের কথায়, ‘ভারতের জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য জরিপেও (ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে) এই সমস্যার ব্যাপকতা বারবার ধরা পড়েছে।’
‘ভারতের অসংখ্য নারী পারিবারিক সংস্কারের চাপে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার হওয়াটাই তাদের ভবিতব্য – কারণ যেকোনো সময়, যখন খুশি বিশেষ সম্পর্ক স্বামীর অধিকার।’
সূত্র : বিবিসি বাংলা।