ঝিনাইদহ

শিক্ষকদের তাড়িয়ে পাঠদান করানো হচ্ছে নৈশপ্রহরী-আয়া-দপ্তরিকে দিয়ে

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় একটি বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হওয়ায় চলছে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের পাঁয়তারা। প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষকদের তাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী, আয়া, দপ্তরি। এতে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেইসঙ্গে দিনদিন কমছে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক এ চক্রের মূলহোতা বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, ২০১২ সালে শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর হাজী মো: শামসুদ্দিন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সেখানে বিনা-বেতনে নিয়মিত পাঠদান করাচ্ছেন আসাদুজ্জামান, নাসিরুল ইসলাম, আমির হামজা, রচনা খাতুনসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক। প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন কয়েক বছর আগে। সম্প্রতি ওই বিদ্যালয় এমপিওভুক্তির আওতায় এসেছে।

বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্তির পর বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি সাহাবুল ইসলাম সাবু এবং বর্তমান প্রধান শিক্ষক রনজিৎ কুমার বিশ্বাস এক সঙ্গে প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষকদের তাড়িয়ে দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের পাঁয়তারা করছে। নতুন করে শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে শিক্ষক চাহিদা পাঠিয়েছেন। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছে বিদ্যালয়ের দপ্তরি, নৈশপ্রহরী ও আয়া।

সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকদের তাড়িয়ে দেওয়ার কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই কমে গেছে। প্রতি ক্লাসে ৮ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তারপরও ক্লাস চলছে না। ৮ম শ্রেণিতে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ের দপ্তরি ক্লাস নিচ্ছেন। অন্যান্য ক্লাসে পাঠদান করানো হচ্ছে না।

বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র অর্ণব রায় বলেন, আমাদের আগের যে শিক্ষক ছিল তাদের আসতে দেওয়া হচ্ছে না। কিছুদিন পর আমাদের এসএসসি পরীক্ষা। কিন্তু এখন আমাদের ক্লাস নিচ্ছে স্কুলের নৈশপ্রহরী-দপ্তরি। এভাবে চললে আমাদের পরীক্ষা তো খারাপ হবে।

শারমিন খাতুন নামের এক ছাত্রী বলেন, আগে যেখানে আমাদের ক্লাসে ৪০-৫০ জন ছাত্রছাত্রী আসত। এখন সেখানে ৮-১০ জনও আসছে না। ক্লাস হচ্ছে না তো এসে কী করবে। আমরা প্রধান শিক্ষককে বলেছি যদি ক্লাস নেন তবে আসব। আজ এসেছি কিন্তু আজও ক্লাস হলো না ঠিকমতো।

প্রিয়া খাতুন নামে আরেক ছাত্রী বলেন, আমাদের আগের স্যাররা অনেক ভালো পড়াতেন। আমরা আমাদের আগের স্যারদের ফেরত চাই।

মনিরুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক বলেন, যারা প্রতিষ্ঠার পর থেকে মেধা, শ্রম দিয়ে বিদ্যালয়টি আজ এখানে নিয়ে আসলো। আর এখন বিদ্যালয়ের সভাপতি সাবু নিয়োগ বানিজ্য করার জন্য পুরাতন শিক্ষকদের তাড়িয়ে দিলো। এটা খুবই অমানবিক। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ইতোমধ্যে আয়া ও দপ্তরির নিকট থেকে অনেক টাকা নিয়ে নিয়োগ দিয়েছে সভাপতি। এই শিক্ষকদের জায়গায় অন্যদের দিয়ে টাকা নেওয়ার পাঁয়তারা করছে সভাপতি।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক আসাদুজ্জামান ও আমির হামজা বলেন, আমরা এতদিন কষ্ট করে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করলাম। আজ আমাদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক এই পায়তারা করছে। তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রনজিৎ ২০২০ সালে স্কুলে যোগদান করে। কিন্তু তার নিয়োগ দেখানো হয়েছে ২০১৩ সালে। এটি তদন্ত করে দেখলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সভাপতি সাহাবুল ইসলাম সাবু বলেন, এখানে নিয়োগ বাণিজ্যের কোনো বিষয় নেই।

জেলা শিক্ষা অফিসার মনিরুল ইসলাম বলেন, ওই বিদ্যালয় থেকে একটি চাহিদা এসেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker