জ্বালানি তেলের দাম বাড়া কিংবা পোল্ট্রি খাবার নয়। হঠাৎ করে ডিমের দাম বাড়ার পেছনে ছিলো কয়েকজন ব্যবসায়ীর সংঘবদ্ধ কারসাজি।
বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দামের অস্থিতিশীলতাকে পুঁজি করেই এই কাজটি করেছেন সাভারের আশুলিয়ার দুজন ডিম ব্যবসায়ী।
অভিযোগ আছে সংকটের বাজারে বেশি ডিম বিক্রি করে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বাড়তি কমিশনও পেয়েছেন তারা।
বাজার ঘুরে দেখা গেলো, আসলে ডিমের দাম নির্ধারণ হয় নিলাম ডাকের মাধ্যমে। তেঁজগাওয়ের এই পাইকারি আড়তে গভীর রাতে ডিম নিয়ে আসেন ব্যাপারীরা।
সেখানেই ডাকের মাধ্যমে ডিম কিনে থাকেন আড়তের ব্যবসায়ীরা। এই ডাকের ওপরই নির্ভর করে পর দিন কেমন যাবে ডিমের বাজার। নির্ধারিত হয়ে যায় খুচরো পর্যায়ের দাম।
এই বাজারর মূলত ছোট ছোট খামারের ডিম আসে। কিন্তু ডিমের সবচেয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ হয় কাজি ফার্ম, প্যারাগন আর ডায়মন্ডের মতো বড় খামারিদের হাত ধরে।
তাদের ডিমের নিলাম হয় অনলাইনে। সাধারণত ভিত্তিমূল্যের চেয়ে ২০ থেকে ৩০ পয়সা বেশি দরে শেষ হয় নিলাম।
গেলো ৫ আগস্ট থেকেই ডিমের বাজার উর্ধ্বমুখী। ১৩ আগস্ট খামারিদের ১০টাকা ৫০ পয়সা ভিত্তিমূল্যের বিপরীতে একলাফে ১১ টাকা ৯০ পয়সা অর্থাৎ প্রতি ডিমে ১ টাকা ৪০ পয়সা বেশি দাম হাকেন আশুলিয়ার দুই ব্যবসায়ী। যাকে অস্বাভাবিক বলছেন অন্য ব্যবসায়ীরা।
নিলামে এতোটা বেশি দাম যে দুজন হাঁকলেন তাদের একজন সাভারের আনিসুর রহমান রিপন। তার প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা সাভার বাসস্ট্যান্ডের ডিমের বাজার। কিন্তু সেখানে এখন তার কিছু নেই। কারণ তিনি কেনাবেচা নিয়ন্ত্রণ করেন ফোনের মাধ্যমে।
আর অন্যজন ফয়সাল সরকার। যার আড়ৎ আশুলিয়ায়। তার বক্তব্য এর আগে খামারি পর্যায়ে ১০ টাকা ভিত্তিমুল্য কখনও ওঠেনি। আর সেটি দেখেই তিনি দাম হাঁকলেন ১১টা ৯০ পয়সা।
তবে অন্য ব্যবসায়ী বলছেন, বাড়তি দামে বেশি ডিম বিক্রি করে রিপন ও ফয়সাল মূলত বড় বড় সব খামার থেকে মোটা কমিশন নিয়েছেন।
পোল্ট্রি শিল্প সমন্বয় কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান জানিয়েছেন, সংকটের সময় বাজারে সুযোগ নেয়ার এমন চেষ্টা অনেকেই করেন।
দেশে দৈনিক প্রায় সাড়ে চার কোটি ডিম বিক্রি হয়। উৎপাদন হয় প্রায় পাঁচ কোটি। আর ২০২০-২১ অর্থ বছরে ডিম উৎপাদন ৩২১ কোটি বেড়ে ২ হাজার ৫৭ কোটি ৬৪ লাখে পৌঁছায়।
এরপরও পোল্ট্রি ফিডে দাম বাড়ার অজুহাতে দফায় দফায় বেড়ে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৬০ টাকায় উঠে। বুধবার থেকে এ দাম কমতে শুরু করে।
এই পরিস্থিতিতে একাত্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ডিম কারসাজির বিষয়টি। এভাবে ডিমের দাম বাড়িয়ে গেলো ১৩ আগস্ট একদিনেই খামারিরা অতিরিক্ত কয়েক কোটি আয় করেছেন। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরাও যে যেভাবে পেরেছেন, বাজারে নৈরাজ্য তৈরি করেছেন।