ঢাকা

বাসচাপায় মৃত্যু, পরিবারকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রায়

রাজধানীর রামপুরা ডিআইটি রোডে সুপ্রভাত বাসের ধাক্কায় নিহত সাইকেল আরোহী পিন্টু শেখের স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও অন্যান্য ওয়ারিশদের ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার ঢাকার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল এবং সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া এ রায় দিয়েছেন। বুধবার (১৭ আগস্ট) আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রায়ে আদালত বলেছেন, এ কথা সত্য মানুষ মরণশীল। মানুষ যেকোনো সময় মৃত্যুবরণ করতে পারে। তবে প্রতিটি মানুষ তার স্বাভাবিক মৃত্যু কামনা করে। এ দেশের মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুসহ গড় মৃত্যুর বয়স অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে ৬৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার দাবি কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। বরং এটি স্বাভাবিক ও সাধারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। মৃত পিন্টু শেখ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সেক্ষেত্রে তার ৬৫ বছর পর্যন্ত চাকরি করার সম্ভাবনাকে যথাযথ ও স্বাভাবিক ছিল বলে বিবেচিত হয়। ফলে তার আরও ৩৭ বছর পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ ছিল। কিন্তু মামলার ড্রাইভার সোহাগ দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে তাকে চাপা দিয়ে তার অকাল মৃত্যু ঘটান।

এক্ষেত্রে মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ১২৮, ১২৯ এবং ১৩০ ধারার বিধানমতে পিন্টু শেখের ওয়ারিশরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। এ আদালতের বিবেচনায় নিহত পিন্টু আরো ৩৭ বছর তথা ৪৪৪ মাস চাকরি করলে মাসিক গড়ে ২০ হাজার টাকা বেতন প্রাপ্তির মাধ্যমে সর্বমোট ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রাপ্ত হতেন। তাছাড়া তিনি এবং তার আত্মীয়-স্বজন পরস্পর তাদের ভালবাসা ও আদর সোহাগ হতে বঞ্চিত হওয়ায় উহা বাবদ তারা ক্ষতিপূরণ পাবেন। এ আদালত এই বিষয়টি বিবেচনায় তারা ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। এভাবে মৃত পিন্টু শেখের ওয়ারিশরা ৮৮ লাখ ৮০ হাজার ও ১১ লাখ ২০ হাজার মিলে মোট ১ কোটি  টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন।

মামলায় বলা হয়, পিন্টু শেখ ২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকা জেলার রামপুরা থানাধীন রামপুরা থেকে বাংলামোটরস্থ বাসা হতে বাইসাইকেলযোগে আসার পথে রামপুরা থানাধীন ডিআইটি রোডস্থ মালিবাগ চৌধুরীপাড়া সিএনজি পাম্পের নিকট উত্তরা ব্যাংকের সামনে পৌঁছা মাত্র রামপুরা ব্রিজের দিক হতে মালিবাগগামী সু-প্রভাত বাসের ড্রাইভার সোহাগ মিয়া বেপরোয়াভাবে দ্রুত গতিতে গাড়ি পিছন দিকে চাপা দেন। ফলে সাইকেলসহ বাসের নিচে পড়ে পিন্টু গুরুতর রক্তাক্ত জখম হন। স্থানীয় লোকজন তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মৃত পিন্টু শেখ এশিয়ান ইলেক্ট্রনিক্স দোকানে চাকরি করতেন এবং তিনি তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা এবং বোন রেখে যান।

মামলায় আরও বলা হয়, মৃত পিন্টু শেখ মাসিক ১৬ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন। প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধি হলে সেক্ষেত্রে তার বয়স ৬৫ বছর না হওয়া পর্যন্ত এই বেতন বৃদ্ধি হয়ে সর্বশেষ মাসিক ১ লাখ ২৩ হাজার ৬০ ষাট টাকা নির্ধারণ হিসাবে ৩৮ বছরে সম্ভাব্য চাকরির মেয়াদকালে তিনি সর্বমোট ২ কোটি ২৭ লাখ ৪৮ হাজার ২৫৬ টাকা টাকা বেতন বাবদ প্রাপ্ত হতেন। তার আত্মীয়স্বজন তার স্নেহ মায়া মমতা ও ভালবাসা হতে বঞ্চিত হওয়ায় উপহার ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লাখ টাকাসহ মোট ২ কোটি ৭৭ লাখ ৪৮ হাজার ২৫৬ টাকার দাবিতে ২০১৭ সালে ক্ষতিপূরণের এই মোকদ্দমা দায়ের করা হয়।

বাদীপক্ষে অ্যাড. একেএম ফয়জুল্লাহ টিটু মামলাটি পরিচালনা করেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাইসাইকেল চালিয়ে কাজে যাওয়ার সময় রামপুরার মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার পেট্রল পাম্পের কাছে সুপ্রভাত পরিবহনের বাসের চাপায় নিহত হন পিন্টু শেখ।

২০১৭ সালে ২ কোটি ৭৭ লাখ টাকার বেশি ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে পিন্টুর পরিবার মামলা করে।

সুপ্রভাত পরিবহনের বাসের ধাক্কায় আরো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়। ২০১৯ সালে বারিধারার পাশে নদ্দায় সুপ্রভাতের আরেকটি বাসের চাপায় নিহত হন এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। তখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাসটির নিবন্ধন বাতিল করে বিআরটিএ।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker