জাতীয়

দিনে গার্মেন্টস কর্মী, রাতে ডাকাত

এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের রূপগঞ্জের ভূলতা গোলাকান্দাইল এলাকায় ২৫ হাজার ডিম বোঝাই পিকআপ ভ্যানসহ ডাকাতির সময় ৬ ডাকাত সদস্যকে শনিবার (১৩ আগস্ট) গভীর রাতে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

এই ডাকাত দলের সদস্যরা দিনের বেলায় কেউ ছিলেন গার্মেন্টস কর্মী কেউবা নির্মাণ শ্রমিক। রাতের বেলা তারাই হয়ে উঠছেন ভয়ংকর আন্ত:জেলা ডাকাত দলের সদস্য। তারা ডাকাতি করেন পণ্যবাহী ট্রাক পিকআপ ভ্যান আর যাত্রীবাহী গাড়িতে।

র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর যৌথ অভিযান চালিয়ে গোলাকান্দাইল এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মুসা আলী, নাঈম মিয়া, শামিম, রনি, আবু সুফিয়ান ও মামুন।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু দেশিয় অস্ত্র। উদ্ধার করা হয় ডাকাতির শিকার দুই ব্যক্তিসহ ডিমবাহী পিকআপ ভ্যান এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বাস।

র‌্যাব ১১’র অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রূপগঞ্জের ভূলতা গোলাকান্দাইল এলাকায় র‌্যাবের টহল চলাকালীন সময়ে একটি ডিম বোঝাই পিকআপ ভ্যানের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখে গতিরোধ করা হয়। এ সময় পিকআপ ভ্যান থেকে দুই ব্যক্তি পালানোর সময় আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথা বার্তায় অসংলগ্ন আচরণ প্রকাশ পাওয়ায় তাদের তল্লাশি করে চাপাতি ও চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে দুজন স্বীকার করেন, তারা যুব কল্যাণ এক্সপ্রেসের একটি বাসের মাধ্যমে ডিমের পিকআপ ভ্যানের পিছু নেয়। এক পর্যায়ে রাস্তা আটকে চালক ও তার সহকারীকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভ্যানটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাদেরকে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে মারধর করে বাসে উঠিয়ে নেয়। এরপর ডাকাত দলের সরদার মুসা ও তার প্রধান সহকারী নাঈম ভ্যানটি নিয়ে গাউছিয়া-মদনপুরমুখী রাস্তায় নিয়ে যায়।

ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা ভ্যানের চালক ও হেলপারকে বাসে করে মদনপুরের দিকে নিয়ে যায়। পরে আটক ডাকাতদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী রাতেই ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত যুব কল্যাণ এক্সপ্রেসের বাসটি আটক করে।

এ সময় বাসটি থেকে ডাকাত দলের আরো ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার ও উদ্ধার করা হয় ভ্যানের চালক ও সহকারীকে। এ সময় র‍্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ৪ থেকে ৫ জন ডাকাত পালিয়ে যায়।

গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তারা ১০ থেকে ১২ জনের এই গ্রুপটি কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিত ডাকাতি করে আসছেন।

তারা পেশায় কেউ গার্মেন্টস কর্মী, ড্রাইভার, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রি ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার।

দিনে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও রাতে ডাকাতি করেন তারা।

চক্রটি মূলত তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি করে জানিয়ে তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, মুসার নির্দেশে প্রথম গ্রুপটি বিভিন্ন গার্মেন্টসের পণ্যবাহী ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে।

দ্বিতীয় দলটি বাস নিয়ে মহাসড়কে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়ে ডাকাতিতে অংশ নেয় এবং তৃতীয় দলটি ডাকাতি করা পণ্য বিক্রি করার জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায়।

এছাড়া পণ্যবাহী গাড়ির রঙ পাল্টে সুবিধাজনকস্থানে বিক্রি করে দিতো ডাকাতরা। অনেক সময় গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলেও বিক্রি করা হতো।

রূপগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) হুমায়ুন কবির মোল্লা জানান, গ্রেপ্তার ৬ ডাকাতকে র‍্যাব রূপগঞ্জ থানায় সোপর্দ করেছে।

এ ঘটনায় ডিমের মালিক আবুল কালাম বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker