জাতীয়

এবার ডাকাত চক্রের কবলে ডিম বোঝাই পিকআপ ভ্যান

এবার ডাকাতির কবলে পড়লো পুষ্টিকর খাদ্যপণ্য ডিম। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডিম ডাকাতি করার সময় গাড়িসহ ছয় ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব।

শুক্রবার রাতে মদনপুর এলাকায় ডিম বোঝাই গাড়িটি ডাকাতির পর চালক-সহকারীকে হত্যার উদ্দেশে কাঁচপুর ব্রিজে নিয়ে যাওয়ার পথে র‌্যাবের টহল টিম চক্রটিকে গ্রেপ্তার করে।

র‌্যাব জানিয়েছে, সারাদেশে মহাসড়কগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ডাকাতি বন্ধে নজরদারি বাড়িয়েছে। যা চলমান থাকবে সামনের দিনগুলোতেও।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর রেকর্ড পরিমাণ দাম বেড়েছে ডিমের। বাজারে এখন খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিমের দাম একশ চল্লিশ থেকে দেড়শ’ টাকা।

ডিমের এমন দাম বৃদ্ধির পর ডাকাতির তালিকায় এসেছে এই খাদ্যপণ্য। শুক্রবার রাতে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২৫ হাজার ডিম বোঝাই একটি পিকআপ ভ্যান ডাকাতি করে একটি চক্র।

ঢাকা নরসিংন্দী রুটে চলা একটি বাস দিয়ে পিকআপটি ব্যারিকেড দিয়ে চালক ও সহকারীকে মারধর করে তারা। উদ্দেশ্য ছিলো কাঁচপুর ব্রিজ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার।

এ সময় মদনপুর এলাকায় র‌্যাবের একটি টহল টিমের হাতে ধরা পরে যায় চক্রের ছয় সদস্য। ডাকাতিতে ব্যবহার করা বাসের জানালা ভেঙ্গে পালিয়ে যায় তিন থেকে চারজন।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, চক্রটি দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা সিলেট-মহাসড়কে ডাকাতি করছিলো। চক্রের সবাই হত্যা ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন মামলার আসামি।

তিনি আরও বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রূপগঞ্জে ভুলতা এলাকায় র‌্যাবের টহল চলার সময়ে একটি ডিম বোঝাই পিকআপ ভ্যানের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখে গতিরোধ করা হয়।

এ সময় পিকআপ ভ্যান থেকে দুজন পালানোর সময় আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথা বার্তায় অসংলগ্ন আচরণ প্রকাশ পাওয়ায় তাদের তল্লাশি করে চাপাতি ও কুড়াল উদ্ধার করা হয়।

তারা দুই জনই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা যুব কল্যাণ এক্সপ্রেসের একটি বাসের মাধ্যমে তারা ডিমের পিকআপ ভ্যানের পিছু নেয়।

এক পর্যায়ে রাস্তা আটকে চালক ও সহকারীকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভ্যান নিয়ন্ত্রণে নেয়। চালক ও সহকারীকে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে মারধর করে বাসে উঠিয়ে নেয়।

এরপর ডাকাত দলের সর্দার মুসা ও তার সহকারী নাঈম ভ্যানটি নিয়ে গাউছিয়া-মদনপুরমুখী রাস্তায় নিয়ে যায়। বাকিরা ভ্যান চালক-সহকারীকে বাসে করে মদনপুরের দিকে নিয়ে যায়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, পরে ডাকাতদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে যুব কল্যাণ এক্সপ্রেসের বাসটি আটক করে।

এ সময় বাসটি থেকে ডাকাত দলের আরও চার সদস্যকে গ্রেফতার করে উদ্ধার করা হয় ভ্যান চালক ও সহকারীকে। এ সময় বাসের জানালা ভেঙে আরও ৪/৫ জন ডাকাত পালিয়ে যায়।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, তারা ১০/১২ জনের এই চক্রটি কয়েক বছর ধরে সোনারগাঁও, রূপগঞ্জসহ বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিত ডাকাতি করে আসছে।

তারা পেশায় কেউ গার্মেন্টস কর্মী, ড্রাইভার, সহকারী আবার কেউ রাজমিস্ত্রি কিংবা কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। দিনে নিজ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও রাতে তারা ডাকাতি করে।

চক্রটি মূলত তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি করে জানিয়ে তিনি বলেন, মুসার নির্দেশে প্রথম গ্রুপটি বিভিন্ন গার্মেন্টসের পণ্যবাহী ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে।

দ্বিতীয় দলটি বাস নিয়ে মহাসড়কে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়ে ডাকাতিতে অংশ নেয়। তৃতীয় দলটি ডাকাতি করা পণ্য বিক্রি করার জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায়।

এছাড়া, পণ্যবাহী গাড়ির রঙ পাল্টে সুবিধাজনক স্থানে বিক্রি করে দেয়, অথবা গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, যুব কল্যাণ এক্সপ্রেসের বাসটি দিয়ে গত প্রায় দেড় বছর ধরে ডাকাতি করে আসছিলো তারা। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে বাসের মালিক ডাকাতির বিষয়ে জানতেন না।

চালকই বাস নিয়ে ডাকাতিতে যোগ দিতেন। আর চক্রটি ডাকাতি করা মালামাল কোথায় বিক্রি করতেন এ বিষয়ে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker