২০১৯ সালে ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির গত ৩২ বছরে সবচেয়ে বড় জয়ের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বরিস জনসন। এরপর তিন বছরেরও কম সময়ে তিনি নিজের দলের এমপিদের সমর্থন হারিয়ে দলীয় প্রধানের পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, যার ফলে তাকে হারাতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর পদও।
এতো কম সময়ে জনসনের এতো বড় পতনের পেছনে কাজ করেছে তার সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ব্যর্থতা।
ক্রিস পিঞ্চার কাণ্ড
গত ২৯ জুন কনজারভেটিভ পার্টির ডেপুটি চীফ হুইপ ও এমপি ক্রিস পিঞ্চার লন্ডনের একটি প্রাইভেট ক্লাবে গিয়ে অশালীন আচরণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
তার বিরুদ্ধে দুই ব্যক্তিকে অযাচিতভাবে স্পর্শ করার অভিযোগ করা হয়। এর ফলে অনেক পুরনো অভিযোগ সামনে চলে আসে। আর এরপরই মূলত শুরু হয়ে যায় বরিসের পতন।
প্রথমে ডাউনিং স্ট্রিট দাবি করে, পিঞ্চারকে ডেপুটি চীফ হুইপ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার আগে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ব্যাপারে জানত না তারা। তবে গত ৪ জুলাই বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জনসন পিঞ্চারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগের ব্যাপারে জানতেন। পরেরদিন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা লর্ড ম্যাকডোনাল্ড নিশ্চিত করেন যে জনসনকে ব্যক্তিগতভাবে এ ব্যাপারে জানানো হয়েছিলো।
পরে বরিস জনসন স্বীকার করে নেন যে, ২০১৯ সালে এ সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পরও তিনি পিঞ্চারকে ডেপুটি চীফ হুইপ হিসেবে নিয়োগ দেন। এর জন্য ক্ষমাও প্রার্থনা করেন তিনি।
পার্টিগেট কেলেঙ্কারি
২০২০ সালের জুনে নিজের জন্মদিনের পার্টিতে যোগ দেয়ার জন্য এ বছরের এপ্রিলে বরিস জনসনকে লকডাউন বিধিনিষেধ ভাঙার দায়ে জরিমানা করা হয়।
এছাড়াও প্রথম লকডাউনের সময় ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে এক পার্টিতে অংশ নেয়ার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি।
জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা সু গ্রে এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলেন, লকডাউনের সময় জনসন সরকারের বেশ কয়েকজন নেতা বিধিনিষেধ ভঙ্গ করেন।
তবে গত ডিসেম্বরে জনসন দাবি করেন, ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে সব বিধিমালা অনুসরণ করা হয়েছিলো। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে কমন্সের একটি কমিটি।
জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট ও ট্যাক্স বৃদ্ধি
এবছর ব্রিটেনে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৯ দশমিক এক শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর অনেক কারণই বরিস জনসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল- যেমন ইউক্রেন যুদ্ধ।
মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার কিছু কিছু পদক্ষেপ নিলেও, এপ্রিল মাসে ট্যাক্সের হার বৃদ্ধি করা হয়।
জীবনযাত্রার ব্যয় যখন গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ, তখন সাধারণ মানুষের ওপর আরও ট্যাক্সের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার জন্য সমালোচনার শিকার হয়েছে জনসন সরকার।
ওয়েন প্যাটারসন কাণ্ড
২০২১ সালে অক্টোবরে তৎকালীন কনজারভেটিভ এমপি ওয়েন প্যাটারসনকে ৩০ দিনের জন্য সাসপেন্ড করার সুপারিশ করে হাউজ অব কমন্সের একটি কমিটি।
কমিটি জানায়, তাকে যেসব কোম্পানি টাকা দেয় তাদের লাভের জন্য লবিয়িংয়ের নিয়ম ভাঙ্গেন প্যাটারসন।
তবে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের নেতৃত্বে তার সাসপেনশনের বিরুদ্ধে ভোট দেন কনজারভেটিভ নেতারা। তদন্ত কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে নতুন একটি কমিটিও গঠন করা হয়।
তবে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্যাটারসন। পরে এ ঘটনায় ব্যর্থতার স্বীকার করেন বরিস জনসন।
মনোযোগ ও চিন্তার অভাব
একটি স্পষ্ট ও সহজবোধ্য নীতির কারণে বরিস বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচনে জয় লাভ করেছিলেন- ব্রেক্সিট সম্পাদন করা।
তবে তার পর থেকে ডাউনিং স্ট্রিটে মনোযোগ ও নতুন আইডিয়ার অভাব ছিল বলে বরিসের সমালোচকদের অভিমত।
বরিসের সাবেক উপদেষ্টা ও বর্তমান প্রধান সমালোচক ডমিনিক কামিংস বরিসকে তুলনা করেছেন একটি নিয়ন্ত্রণহীন শপিং ট্রলির সাথে, যিনি এক অবস্থান থেকে আরেক অবস্থানে মোড় ঘুরে বেড়ান।
কনজারভেটিভ এমপি ও সাবেক মন্ত্রী জেরেমি হান্ট অভিযোগে করে বলেন, জনসনের ‘সততা, দক্ষতা ও দূরদৃষ্টির’ অভাব রয়েছে।