পদ্মা সেতু প্রকল্প ও নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকেই নানা ষড়যন্ত্র, বিভ্রান্তি ও গুজবের মুখে পড়তে হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সবচেয়ে বড়ো প্রকল্পের স্বপ্নের এ সেতুকে। তবে সবকিছুকে পেছনে ফেলে পদ্মা সেতু আজ এক দৃশ্যমান বাস্তবতা। ২৫ জুন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করার পর ২৬ জুন থেকে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় পদ্মাসেতু। তবে এখনও থেমে নেই বিভ্রান্তি ছড়ানো।
অভিযোগ, পদ্মাসেতু নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর দৌঁড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে সাবেক বিরোধী দল বিএনপি। দেশের মানুষের শ্রমে আর ঘামে নির্মিত এই সেতু বাস্তবায়ন হওয়ার পরেও বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রবণতা থেকে সরে আসতে পারেনি দলটি। সম্প্রতি যার এক উদাহরণ দেখা যায় বিএনপির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে।
২৬ জুন সন্ধ্যায় বিএনপি তাদের ফেসবুক পাতায় ভাইরাল হওয়া এক টিকটক ভিডিওর উদ্ধৃতি দিয়ে লেখে, ‘৩০ হাজার কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকার ব্যয় করে ত্রুটিযুক্ত সেতু নির্মাণ! প্রথম দিনেই নাট-বল্টু খুলে যাচ্ছে।’
৩৪ সেকেন্ডের ওই ভাইরাল টিকটক ভিডিওতে দেখা যায়, বায়েজিদ তালহা নামের এক টিকটকার সেতুর রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দুটি বল্টুর নাট খুলছেন। ভিডিও ধারণকারীকে বলতে শোনা যায়, ‘এই লুজ দেহি, লুজ নাট, আমি একটা ভিডিও করতেছি, দ্যাহো’।
নাট হাতে নিয়ে বায়েজিদ বলেন, ‘এই হলো পদ্মা সেতু, আমাদের… পদ্মা সেতু। দেখো আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু। এই নাট খুইলা এহন আমার হাতে।’
ভিডিওটি টিকটকে প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ নানা মহলের। ইতিমধ্যে বায়েজিদ তালহাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে নিয়েছে সিআইডি।
এদিকে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বায়োজিদকে সাবেক বিএনপি কর্মী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট-বল্টু কোনো যন্ত্রাংশ ছাড়া শুধু হাত দিয়ে খোলার কথা নয় বলে দাবি করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলেছে, আটক বায়েজিদ তালহা আগেই যন্ত্র দিয়ে নাট খুলে পরে খালি হাতে সেটি খোলার ভিডিও করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, বায়েজিত তালহা পরিকল্পিতভাবেই এই কাজটি করে থাকতে পারে। তাকে পুরো ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের রাজনৈতিক পরিচয় নয়, শুধু অপরাধের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। কোনো যন্ত্রাংশ ছাড়া শুধুমাত্র হাত দিয়ে পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু খোলা সম্ভব নয়।
অপরদিকে বিএনপি’র ওই প্রচারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি’র ওই পোস্ট প্রচার হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ভ্যারিফায়েড এক ফেসবুক পোস্টে দলটি লেখে, বিএনপি আজ পর্যন্ত পদ্মা সেতুকে ঘিরে তাদের অপরাজনীতি থেকে ফিরে আসেনি। এমনকি তাদের নেত্রীর জোড়াতালির তত্ত্ব থেকে তাদের সাইবার টিমও বের হতে পারেনি। পদ্মা সেতু নিয়ে কল্প কাহিনী ছড়িয়ে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ ও পরাজিত বিএনপি ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই তাদের ভেরিফাইড পেজ দিয়ে চালাচ্ছে অপপ্রচার।
তারা লেখে, পদ্মা সেতুর নাট খুলে আটক বাইজিদ ছাত্রদলের কর্মী ছিলেন। সাথে থাকা টুল বক্সের যন্ত্রপাতি দিয়ে খুলে ফেলেন রেলিং এর নাট -যা বাংলাদেশের প্রথম সারির সব গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।
কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে আওয়ামী লীগ জানায়,পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট-বল্টু খুলে আটক মো: বায়েজিদ মৃধা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পটুয়াখালীতে থাকাকালে তিনি ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী মো: আশফাকুর রহমান বিপ্লবের অনুসারী ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদলের একাধিক নেতা।
বাইজিদের বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের তেলীখালী গ্রামে।
তার চাচা মো: ফোরকান মৃধা বলেন, বাইজিদ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন মোহনের চাচাতো ভাই। সে মোহনের সঙ্গে বিএনপির বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে যেতো।
আওয়ামী লীগ দাবি করে, বায়েজিদের এই বিভ্রান্তিকর টিকটক ভিডিওকে পুঁজি করে কোনো যাচাইবাছাই ছাড়াই বিএনপি ‘পদ্মাসেতুর ত্রুটি’ নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে একটুও পিছুপা হলো না।