কুড়িগ্রাম জেলা ও তার আশে পাশে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সেখানকার প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
রোববার (১৯ জুন) বিকেলে সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলার ৪৯টি ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক চরের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রৌমারী উপজেলা। সেখানে প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে বেশ কয়েকটি পাকা সড়ক।
বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা থাকায় জেলা প্রশাসন থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে জেলা প্রশাসক দপ্তরে ও প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও আইন শৃঙ্খলা সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৩৬১টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মুড়িয়ারহাট এলাকায় দুধকুমার নদের একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে আরও পাঁচটি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে শুক্রবার সকালে এই বাঁধটি ভেঙে যায়। ঝুঁকিতে রয়েছে সারডোব, বাংটুরঘাট ও গুরুত্বপূর্ণ যাত্রাপুর বাজার সংলগ্ন ক্রস বাঁধটি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলায় আরও পানি বাড়বে এবং পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। সেকারণে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো মেরামতের কাজ চলছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, রোববার পর্যন্ত জেলায় ১০ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এরমধ্যে ছয় হাজার ৮০৬ হেক্টর জমির পাট ক্ষেত রয়েছে।
এদিকে বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য ও জ্বালানীর তীব্র সংকট। কাজ বন্ধ হওয়ায় দিনমজুর পরিবারগুলোর ঘরে খাদ্য সংকট প্রকট হয়েছে। চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় গবাদী পশুর খাদ্য মিলছেনা। চরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে হাট বাজার যাতায়াতসহ যোগাযোগের চরম ভোগান্তিতে পড়েছে বানভাসি মানুষ।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানিয়েছেন, জেলার ৪৯টি ইউনিয়ন বন্যা প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে এ পর্যন্ত ৩১৩ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৪ লাখ টাকা, পশুখাদ্য বাবদ ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও শিশুখাদ্য বাবদ ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।