প্রতিটি দেশের একটি জাতীয় খেলা থাকে। আমাদের জাতীয় খেলা হাডুডু বা কাবাডি। কিন্তু কালক্রমে এই খেলার কদর হারিয়ে যেতে বসেছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরেও বিদেশি খেলার কাছে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই হা-ডু-ডু খেলা। ক্রিকেট, ফুটবলের কাছে এখন প্রায় বিলিনের পথে জনপ্রিয় এই হা-ডু-ডু অথবা কাবাডি। ১০ বছর আগেও স্কুল ভিত্তিক, গ্রামগঞ্জে কাবাডি প্রতিযোগিতার আয়োজন চোখে পড়ত। বর্তমানে সেটাও চোখে পড়ে না। অনেকে হাডুডু খেলার নিয়ম পর্যন্ত জানে না। হা-ডু-ডু ও কাবাডি খেলা এক সময় বেশ জনপ্রিয় ছিল যে গ্রামবাংলায় এ খেলাগুলো না দেখলে ছোট থেকে মরুব্বী পর্যন্ত আনন্দই হত না। কোনো এক সময় গ্রামবাংলায় এই খেলার ধুম ছিল বেশ। উৎসব করে হতো,আন্তর্জাতিকভাবেও পেয়েছে স্বীকৃতি এ খেলা। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এই হা-ডু-ডু, এখনকার ছেলেমেয়েদের কাছে হা-ডু-ডু পাঠ্যপুস্তকের কেবল একটি নাম। এ যুগের ছেলেমেয়েরা তাদের দেশীয় সংস্কৃতির চাইতে বিদেশি খেলার প্রতি নজর বেশি।
কটিয়াদী উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় হা-ডু-ডু খেলার কোন আয়োজন কোন গ্রামে নেই। আগে গরু খাসী কিংবা টেলিভিশন পুরস্কার দিয়ে হা-ডু-ডু খেলার আয়োজন করা হতো,বর্তমানে এই খেলা গ্রাম বাংলায় আর দেখা যায় না। নতুন নতুন খেলার ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের এই জাতীয় খেলা। দেশী খেলাগুলোকে বাদ দিয়ে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা কেন্দ্র করে সারারাত জেগে খেলা উপভোগ করেন। আর খেলাগুলোকে উঠতি বয়সের যুবক ছেলেরা বাজি ধরছেন। কেউ বাজিতে হারছে কেউ জিতছেন। বিশেষ করে প্রতি বছর বিশ্বকাপ ক্রিকেট ও ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র প্রিয়দলের হারজিত নিয়ে পক্ষ প্রতিপক্ষের মধ্যে ঝগড়া মারামারি হচ্চে। বর্তমানে ভারতীয় খেলা আইপিএল এবং বাংলাদেশের বিপিএল খেলা নিয়ে এতে ব্যস্ত। এসব খেলাকে কেন্দ্র করে অনলাইনে জুয়ার দিকে আকৃষ্ঠ হচ্চেন। এতে করে নিঃস্ব হচ্ছের সাধারন পরিবারের ছেলেরা।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে এ খেলার নামকরণ হয় কাবাডি। সে বছরই কাবাডি জাতীয় খেলার মর্যাদা পায়, তবে জাতীয় খেলার মর্যাদা পেলেও এই খেলা তখন কেবল গ্রাম বাংলাতেই হতো। ১৯৭৮ সালে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং বার্মার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশন গঠন করা হয়। ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কলকাতায় এশিয়ান কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে ভারত চ্যাম্পিয়ন এবং বাংলাদেশ রানার্সআপ হয়। ১৯৯০ সালে প্রথমবারের মতো বেইজিং-এ অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে অন্তর্ভুক্ত হয় কাবাডি। এই প্রথম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রৌপ্য পদক গ্রহণ করে বাংলাদেশ।
গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া খেলাটির অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে শুক্রবার বিকালে কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নে ফেকামারা গ্রামে আয়োজন করা হয় হা-ডু-ডু প্রতিযোগীতার। এতে বদরুল আলম নাঈমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডাঃ মোঃ মুশতাকুর রহমান,সে¦চ্চাসেবকলীগ নেতা মাহমুদুল হামান মামুনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও কয়েক হাজার দর্শকবৃন্দ।
লোহাজুড়ি ইউনিয়নের ইমাম উদ্দিন নামের এক যুবক বলেন, অনেকদির পর গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাটি দেখে তিনি ভীষন খুশি। একই সাথে তিনি আয়োজক কমিটিকেও ধন্যবাদ জানান। তিনি আরো বলেন, শুধু হা-ডু-ডু নয়, হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার সকল ঐহিত্যবাহী খেলাই ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।
নোয়াকান্দি গ্রামের প্রবীন লোক ছায়ু ব্যাপারি জানান, আমাদের সময় গ্রামীন খেলাগুলো হা-ডু-ডু, দাড়িয়াবান্দাসহ অনেক রকম খেলা হত। এখন আর চোখে পড়েনা খেলাগুলো। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্চে খেলাগুলো।