জাতীয়

শ্রদ্ধা-ভালোবাসা নিয়ে স্ত্রীর পাশে শেষশয্যায় গাফফার চৌধুরী

রাষ্ট্রীয় সম্মান আর সবস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে স্ত্রীর কবরের পাশে শেষ শয্যা নিলেন একুশের অমর গানের রচয়িতা, লেখক ও সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী।

শনিবার সকালে লন্ডন থেকে তাঁর মরদেহ ঢাকায় পৌঁছালে জানানো হয় রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা। শহীদ মিনারে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান সবস্তরের মানুষ। আর প্রেসক্লাবে শ্রদ্ধা জানান সাংবাদিকরা।

১৯৭৪ সালে প্রবাস জীবন শুরুর পর বারবারই দেশের মাটিতে থিতু হতে চেয়েছিলেন গাফফার চৌধুরী। কিন্তু স্ত্রীর অসুস্থতা সেটি হতে দেয়নি।

অবশেষে শনিবার দেশে ফিরলেন বাংলা ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা এই কীর্তিমানের নিথর দেহ।

তাঁর কফিন দেশের মাটি স্পর্শ করার পরপরই তা ঢেকে দেয়া হয় লাল সবুজের পতাকায়। যে পতাকার জন্য তিনি লড়েছেন দুরন্ত যৌবনে। তার মরদেহ গ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী।

যে গান ছাড়া একুশের প্রভাত ফেরি হয় না, তাঁরই লেখা সেই গানের সুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌছায় তাঁর মরদেহ। দেয়া হয় রাষ্ট্রীয় সন্মান।

বেলা সোয়া একটার দিকে ঢাকা জেলা প্রশাসক এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহের কফিন অনুষ্ঠানের মঞ্চে নেয়া হয়।

গাফফার চৌধুরীকে প্রথমে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম।

এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কবীর আহাম্মদ শ্রদ্ধা জানান। এরপর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শ্রদ্ধা জানান।

আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদন বেলা তিনটা পর্যন্ত চলবে।

দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকেও তাঁর মন ও মনন জুড়ে ছিল বাংলাদেশে। সব সঙ্কটে দেশ ও গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলো তাঁর কলম।

সবস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানালেও আসেনি বিএনপি। যার সমালোচনা করলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

তিনি বলেন, বরেণ্য সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কলাম লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে না এসে ভুল করেছে বিএনপি।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে আবদুল গাফফার চৌধুরীর মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর বিকেল চারটার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে শেষ জানাজার পর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে।

যে প্রিয়তম স্ত্রীকে সুস্থ করতে দেশ ছেড়েছিলেন, মীরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সেই স্ত্রীর পাশেই শেষ শয্যায় শায়িত হন ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গাফফার চৌধুরী।

গত ১৯ মে ভোরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একটি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

বরিশালের উলানিয়া গ্রামের চৌধুরীবাড়িতে ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। তিনি একজন সুপরিচিত বাংলাদেশি সাংবাদিক, গ্রন্থকার ও কলাম লেখক।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker