জাতীয়

স্বর্ণ উদ্ধার চাপা দিয়ে মাদকের মামলা: এসপি আলতাফ চাকরিচ্যুত

১২০ ভরি স্বর্ণসহ আটক হয়েছিলেন এক চোরাকারবারী। ঘটনাটি ২০১৬ সালের ৬ অক্টোবর সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানায়। ওই স্বর্ণের জব্দ তালিকাও করেছিল পুলিশ। পরে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্বর্ণ জব্দের পরিবর্তে মাদক উদ্ধার দেখিয়ে মাদক আইনে মামলা হয়। এ ঘটনা নিয়ে বিভাগীয় মামলা হলে তদন্তে দোষী প্রমাণিত হন সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) আলতাফ হোসেন, যে কারণে শেষ পর্যন্ত চাকরিচ্যুত করা হলো তাকে।

গত বুধবার (১৮ মে) আলতাফকে ‘চাকরি হইতে অপসারন’ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। আলতাফ সবশেষ সিলেটে পুলিশ সুপার, ট্যুরিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আর সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার ছিলেন ২০১৬ সালের ২৩ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

২০১৭ সালের পুলিশ সপ্তাহে আগের বছরের কাজের জন্য রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদকও (পিপিএম) পেয়েছিলেন আলতাফ। ২০১৬ সালে গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য তিনি পিপিএম পদক পান বলে ওই বছরের পুলিশ সপ্তাহের স্মরণিকায় উল্লেখ করা হয়।

গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানা এলাকায় পুলিশ বিপ্লব চ্যাটার্জি নামের একজন স্বর্ণ চোরাকারবারীর কাছে থাকা ১২০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধারের বিষয়ে জব্দ তালিকা তৈরির কথা এসপিকে জানানো হয়।

কিন্তু ওই ঘটনায় স্বর্ণ চোরাচালানের মামলা রেকর্ড না হয়ে মাদক মামলা রেকর্ড হওয়া, স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় মাদক মামলা সাজানোর বিষয়টি জানা স্বত্ত্বের দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি তিনি এবং এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অসত্য প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়।

এতে বলা হয়, এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করে পুলিশ অধিদপ্তর। এরপর অভিযুক্ত কর্মকর্তা ২০১৯ সালের ৪ অগাস্ট অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণীর জবাব দেন। ওই বছরের অক্টোবর মাসে তিনি ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নেন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য এবং শুনানিতে তার বক্তব্য পর্যালোচনা করে অভিযোগটি তদন্তের জন্য ২০২০ সালের ২৫ জুন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আতাউল কিবরিয়াকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তের পর ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর আতাউল কিবরিয়া প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ প্রমানিত হয়েছে’।

এরপরের নিয়ম অনুসরনের বিষয়গুলো তুলে ধরে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা চাকরি থেকে অপসারণের গুরুদণ্ড আরোপের বিষয়ে সরকারী কর্ম কমিশনের পরামর্শ চাওয়া হয়। কমিশন গত ৪ এপ্রিল চাকরি থেকে অপসারণের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে চিঠি দেয়। তাকে চাকরি থেকে অপসারণের বিষয়ে সম্মতি দেন রাষ্ট্রপতিও। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মচারী বিধি অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গুরুদণ্ড হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে তাকে ‘চাকরি হইতে অপসারন’ করা হল।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য চেষ্টা করেও আলতাফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মোবাইল ফোনে এসএমএস করা হলেও সাড়া দেননি অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা আলতাফ।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker