শিক্ষা

আন্দোলন করে ৪ বছরে মুক্তি মেলেনি সাত কলেজের

আজ ২০ জুলাই সাত কলেজের কালো দিন ২০১৭ সালের এ দিন ফল প্রকাশ ও পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেলে দৃষ্টিশক্তি হারান তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান। সরকারি খরচে বিদেশে নিয়ে সিদ্দিকুরের চিকিৎসা করালেও আলো ফিরেনি সিদ্দিকুরের চোখে। পরে সিদ্দিকুরের জন্য সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা হয় কিন্তু সাত কলেজের কি সমস্যার শেষ হয়েছে??
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমাতে উচ্চশিক্ষার গুনগত মান বৃদ্ধি করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যাগে ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ও সরকারি বাঙলা কলেজ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার চার বছর পেরিয়ে গেলেও রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের সংকট কাটেনি। এখনো এসব কলেজের ফল প্রকাশে দেরি হচ্ছে, রয়েছে গণহারে ফেল করানোর অভিযোগ। সেশনজটের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন, শিক্ষাপঞ্জিও ঘোষণা করা হয়নি। একাডেমিক বিভিন্ন সমস্যায় হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে অনেকের। নির্দিষ্ট একাডেমিক ভবন ও স্বতন্ত্র প্রশাসন না থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দু-টানায় যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে সাত কলেজ কর্তৃপক্ষকে পড়তে হয় সমস্যায়।
সাত কলেজর সমস্যা সমাধানে বার বার শিক্ষার্থীদের নামতে হয়েছে রাজপথে, আন্দোলন ছাড়া যেন কোন দাবিই পূরণ হয়না কলেজগুলোর। তারপরও অবহেলিত হচ্ছে সাতটি কলেজ। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবে আজ ঐতিহ্য হারাতে বসেছে কলেজগুলো। শিক্ষার্থীরা আজ এই কলেজে পড়া মানে অভিশাপ মনে করছে। এর জন্য দায়ী করছেন সরকারের অবিবেচক সিদ্ধান্তকে শিক্ষার্থীরা মনে করে সাত কলেজের দেখভালে ব্যর্থ ঢাবি প্রশাসন।
অধিভুক্ত সাত কলেজের প্রথম আন্দোলন শুরু হয় ২০ই জুলাই ২০১৭ ঐ দিন পরীক্ষার রুটিন প্রকাশের দাবিতে আন্দোলনে নামে সাত কলেজ। পরীক্ষার রুটিন প্রকাশের দাবীতে শাহবাগ মোড়ে কেন্দ্রীয় জাদুঘরের সামনে রাস্তা অবরোধ করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে রাজধানীর ৭টি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। কোন রাজনৈতিক বা সরকার বিরোধী আন্দোলন ছিলোনা কিন্তু এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ হামলা করে গুলি চালায়, টিয়ারসেল ছোড়ে এতে প্রায় ১৫-২০ জনের মত গুরুতর আহত হয়। টিয়ারসেল এর আঘাতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দীক হারান তার দুটি চোখ। পুলিশ এবং শিক্ষার্থীদের পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে আলোচনা তর্ক বিতর্ক চলে সংসদে। অজ্ঞাত প্রায় ১২০০ ছাত্রের নামে রমনা থানায় মামলা করে পুলিশ।
এরপরে বিভিন্ন সময় পরীক্ষার দাবি, সাত কলেজের স্বতন্ত্র প্রশাসন দাবি, অধিভুক্ত বাতিল সহ বিভিন্ন বিষয় আন্দোলন হয় কিন্তু প্রতিবার কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামিয়ে দিলেও সমস্যার সমাধান হয়নি আজও। সমকালীন সময়ে করোনা টিকা প্রাপ্তি নিয়ে চলছে অবহেলা তালিকায় নাম উঠে না সাত কলেজের। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ।
বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া মাহাবুব দিপা বলেন এখনো সময় মতো রেজাল্ট প্রকাশ করা হয় না। পরিক্ষার সময় সূচি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর তালবাহানার অভাব হয় না। সেশনজটে আঁটকে গেছে জীবন। তার অভিযোগ শিক্ষকদের থেকে কোনো বিষয়ে সহজে সাড়া মিলে না।
ইডেন কলেজ শিক্ষার্থী জেরিন হাসান বলেন, “সাত কলেজ যেন অভিভাবকহীনতায় ভুগছে সেই প্রথম থেকেই। কোন স্বতন্ত্র প্রশাসন নেই সাত কলেজের জন্য। অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় আমরা। আন্দোলনই কি আমদের শেষ পন্থা? রস্তাই কি আমদের শেষ আশ্রয় ? কতৃপক্ষের সহযোগিতা চাই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসুন।”
ইডেন কলেজ শিক্ষার্থী অধরা তানভি বলেন, “সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। তেমন কোনো গুরুত্ব দেয় না। সব কিছুতেই পিছিয়ে আছে। যেসব দাবী ছিলো তার কোনো টাই পুরণ হয়নি। পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করলেও সেই সময় মতো পরীক্ষা হচ্ছে না। বার বার পিছিয়ে দেয়া হয় সময়। টিকা প্রাপ্তিতে এখন অনিশ্চয়তা।”
সাত কলেজ ও ঢাবি সূত্রে জানা যায়, সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে, করোনা কালীন মূহুর্তে সেশনজট কমাতে ইতিমধ্যেই শিক্ষাবর্ষ ৮ মাসে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জমে থাকা পরীক্ষা করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে নিয়ে নেয়া হবে। সমাধানের চেষ্টা করেছে বলে জানা যায়।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker