কৃষি ও পরিবেশ

মায়ের প্রতি সন্তানের অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি ফসলের জমিতে

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় কৃষক এনামুল হক ফসলের জমিতে মাকে নিয়ে ভালবাসার প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।

বৃহস্পতিবার (৫ মে) সরেজমিনে গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়। শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের বেকাসাহরা গ্রামে বরমী-সাতখামাইর-মাওনা সড়কের পাশে বেগুনি ও ব্ল্যাক রাইস জাতের সবুজ রঙের ধানের চারায় মা শব্দটি দেখতে প্রতিদিন মানুষ ভিড় করছেন।

এনামুল হক জানান, বেগুনী ও ব্ল্যাক রাইস জাতের সবুজ ধানের বীজ সংগ্রহ করে বীজতলা তৈরি করেন। পরে বীজতলার চারা দিয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ নেন। সুতা টেনে মা লেখার কাঠামো তৈরি করেন। পরে ব্ল্যাক রাইস জাতের সবুজ রঙের ধান রোপণ করেন। চারপাশে বেগুনী রঙের ধানের চারা রোপণ করেন। সময় যেতে থাকে আর ধানের চারাগুলো বড় হয়ে ‘মা’ লেখাটি ক্রমশও ফুটে উঠে।

তিনি জানান, স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন এ কাজে তাকে সরাসরি পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এক ফসলের জন্য প্রায় ৫০ শতক জমি ভাড়া নিয়ে তার চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তোলেন।

মা’র প্রতি তার ভালোবাসার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, অর্ধ-যুগের বেশি সময় আগে তার বাবা মারা যান। একমাত্র ছেলে হিসেবে তিনি ছোটবেলা থেকেই মাকে বেশি ভালবাসেন। মাকে ভালবাসলে কোনো সন্তান মার কথার অবাধ্য হবে না। অবাধ্য না হলে সেই ছেলে কখনো খারাপ পথে যাবে না, মাদক নেবে না। মা’র কথা শুনলে তার জীবন মঙ্গল হবে।

বয়োবৃদ্ধ মা জোহরা বেগম (৬৫) বলেন, ধানের চারা দিয়ে জমিতে মা লেখাটি মানুষ যখন দেখতে আসেন তখন তিনি এ খবরটি পান।এর আগে ছেলের এমন আয়োজনের বিষয়ে তিনি জানতেন না।

তিনি আরও বলেন, এ বয়সে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না। গায়ের কাপড় জড়ানো, গা মুছে দেওয়া, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া এসব কাজে তার ছেলে তাকে সহযোগিতা করেন। ছেলের ভালবাসায় তিনি আপ্লুত। পৃথিবীর সকল সন্তান যেন মাকে বেশি ভালবাসেন এবং যত্ন করেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন এনামুল হকের মা জোহরা বেগম।

ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার মাস্টার-বাড়ি থেকে নটরডেম কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে এনামুল হকের ধান গাছের চিত্রকর্ম দেখতে আসেন। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থাকার কারণে এ জগতে কোনো কিছুই চাপা থাকে না। এটিও সাধারণত চাপা ছিল না। এ সুযোগে কৃষক এনামুল হকের ভালোবাসা দেখতে আসা। তার এ কর্মে মার ভালোবাসার উপলব্ধিটা সকলের মাঝে ফুটে উঠেছে।

ব্যবসায়িক কাজে প্রতিদিন বরমী-সাতখামাইর-মাওনা সড়কে চলাচল করেন আতিক হাসান। তিনি বলেন, যতবার মা লেখাটি দেখি ততবারই মা’র প্রতি মহব্বত বাড়তে থাকে। আমার মতো অসংখ্য মানুষ সারাদিন এ দৃশ্যটি দেখতে আসেন। অনেকে সেলফি তোলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এটি এখন আমাদের এলাকায় একটি আলোচিত ঘটনা।

স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন বলেন, ধানের চারার চিত্রকর্মটির মূল পরিকল্পনাকারী কৃষক এনামুল। তিনি শুধু বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সহযোগিতা নিয়েছেন। অসম্ভব এক সৃষ্টিকর্মের প্রতিফলন দেখিয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতে এরকম আরও কিছু করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন তিনি।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker