ধামইরহাট

বাঁশ শিল্পীর কদর নেই

নওগাঁর ধামইরহাটে বাঁশ শিল্পের তৈরী জিনিসপত্রের কদর নেই বললেই চলে। ওই সব পণ্যের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে প্লাস্টিকের জিনিপত্র। প্লাস্টিকের জিনিস পত্রের দাম কম হওয়ায় মানুষ এখন প্লাস্টিকের সাংসারিক উপকরণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।

সদরস্থ দক্ষিণ চকযদু গ্রামের বাঁশ শিল্পের বয়োবৃৃদ্ধরা জানান, একসময় তাদের কাছে ১০-১২ জন করে বাঁশ শিল্পের কারিগর ছিল। তখনকার দিনে একজন কারিগরের বেতন ছিল প্রতিদিন ১শ থেকে ১২০ টাকা। এখন সে কারিগরদের বেতন দিতে হয় ৫শ থেকে ৬শ’ টাকা। তাও আবার সময় মত শ্রমিক মেলেনা।

তারা আরো জানান, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাঁশের তৈরী জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আগে একটি বাঁশের দাম ছিল ৫০-৬০ টাকা, সেখানে এখন একটি বাঁশ কিনতে ২৫০ থেকে ৩০০শ’ টাকা লাগে। তাই এ শিল্পের সাথে জড়িত পরিবারগুলো আর্থিক অনটনের মধ্যে দিয়ে দিন অতিবাহিত করছেন। এ উপজেলার কয়েক বছর হলো পৈত্রিক পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন দিন মজুরি বা অন্যান্য কাজ-কর্ম করছেন অনেকেই।

তারা আরো জানান, সারা দিনে বেচাঁ-বিক্রি করে ২-৩শ টাকা লাভ হয় তাই দিয়ে কোন মতে পরিবার নিয়ে খেয়ে পড়ে চলি। বাঁশ শিল্পের জিনিসপত্রের দামের তুলনায় প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসের দাম কম। বাঁশ দিয়ে মোড়া তৈরি করতে যে খরচ হয় তার চেয়ে কম টাকায় প্লাস্টিকের মোড়া পাওয়া যায়। আগে বেতের তৈরি দাঁড়িপাল্লা দিয়ে ওজন করা হতো বর্তমান আধুনিক ডিজিটাল মাপের মেশিন আসায় দাঁড়ি পাল্লার কদর শূন্যের কোঠায় পৌঁচেছে। বৈশাখ মাসে গ্রামীণ উৎসব বা মেলাতে বাঁশ ও বেতজাত শিল্পীদের তৈরি চাটাই, কুলা, মোড়া, টোপা চোখে পড়ে খুব কম। বিদ্যুৎ যেমন হাতপাখার চাহিদা কমিয়েছে, তেমনি মৎস্য শিকার, চাষাবাদ, ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র সকল ক্ষেত্রেই কমেছে বাঁশ আর বেত জাতীয় হস্ত শিল্পের কদর। ৯০ দশকের পর থেকে ধীর গতিতে কমে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেতের সামগ্রীগুলো। আগামী দশকে হয়তোবা শুধুমাত্র স্মৃতি হিসাবেই রয়ে যাবে, বাঁশ ও বেতের তৈরী আসবাবপত্র জাদু ঘরে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker