জাতীয়

‘সাধ্যমতো চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে স্বস্তি নিয়ে আসার’

চলমান বৈশ্বিক সঙ্কটকালেও জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সচেষ্ট রয়েছে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (১৩ এপ্রিল) জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে এমন কথা বলেন তিনি। এসময় তিনি দেশবাসীকে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানান।

করোনাভাইরাস মহামারীতে গত দুই বছর উদযাপনহীন বর্ষবরণের পর এবার পরিস্থিতির উন্নতিতে যখন নানা আয়োজন, তখন ইউক্রেইন যুদ্ধ নামিয়ে এনেছে নতুন সঙ্কট। বঙ্গাব্দ ১৪২৯ উপলক্ষে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ নিয়ে আসা প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক সঙ্কট ও সরকারের তৎপরতা সবিস্তারে তুলে ধরেন দেশবাসীর কাছে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধের ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় পণ্য পরিবহণ ব্যয়ও ব্যাপক ভাবে বেড়ে যাওয়ার তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, “এরফলে আমাদের দেশেও কিছু কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

“আমরা কিন্তু চুপচাপ বসে নেই। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে স্বস্তি নিয়ে আসার।”

রোজার মধ্যে মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন সরকার প্রধান।

টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে প্রায় ১ কোটি পরিবারকে কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাশ্রয়ী দামে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন তিনি। ঢাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রতিদিন ১৫টি ফ্রিজার ভ্যানে করে সাশ্রয়ী দামে মাংস, ডিম ও দুধ বিক্রির কথাও তিনি বলেন।

এছাড়া ঈদ উপলক্ষে ১ কোটি ৩৩ হাজার ৫৪টি ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে ১ লাখ ৩৩০ মেট্রিক টনের বেশি চাল বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান সরকার প্রধান।

বর্তমান পরিস্থিতিতে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “কিছু কিছু গণমাধ্যমে এমনভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে যেন দেশে দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে।

“সাশ্রয়ী দামে পণ্য কেনার জন্য টিসিবির দোকানে মানুষ ভিড় করবে, এটাই স্বাভাবিক। এটাকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার কী কারণ থাকতে পারে? আমি দৃঢ়ভাবে আপনাদের জানাতে চাই যে দেশে চাল-সহ কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই।”

দেশের মেগাপ্রকল্পগুলো নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়ানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে, কোনো ঋণ নেওয়া হয়নি। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে আমরা অন্যান্য মেগাপ্রকল্পগুলো গ্রহণ করেছি। আর শুধু ঋণ নয়, বিদেশি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তিবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতির চেহারা বদলে যাবে।

“আমরা দেশি-বিদেশি ঋণ নিচ্ছি। তবে তা যাতে বোঝা হয়ে না উঠে, সে দিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সম্পদ বৃদ্ধি এবং মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করা।”

দেশের অর্থনীতি সঙ্কটে নেই বলে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারীর সময়ও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬.৯৪ শতাংশ হয়েছে। গত অর্থবছর রেকর্ড ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে। এ বছরও আশানুরূপ রেমিটেন্স আসছে। গত বছর রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৪ দশমিক দুই-দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮ দশমিক ছয়-এক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

“এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এ বছর রপ্তানি আয়ে বাংলাদেশ নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে, ইনশাআল্লাহ “ বলেন তিনি।

দেশের অর্থনীতির মূল শক্তি কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতির চিত্র তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সরকারের কৃষি-বান্ধব নীতির ফলে চাল,শাক-সবজি,মাছ,মাংস,ডিম,দুধ উৎপাদনে আমরা এখন স্বয়ং-সম্পূর্ণ।কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি বোরো মওসুমে ধানের বাম্পার ফলন আশা করা হচ্ছে।”

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker