রাজনীতি

নুর-রাশেদ মুখোমুখি, ছাত্র অধিকার পরিষদে ফের ভাঙন

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে `সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের’ অভিযোগ এনে কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর।

এর পাল্টায় নূরের ওই ঘোষণাকে ‘চরম অসাংগঠনিক কার্যকলাপ’ আখ্যায়িত করে তাকে কারণ দর্শাও নোটিস দেওয়ার কথা জানিয়েছেন আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন। পাল্টাপাল্টি এমন ঘোষণার মধ্যে দিয়ে কার্যত নতুন করে ভাঙনের কবলে পড়ল তিন বছর আগে সরকারি চাকরির কোটা সংরক্ষণের বিরোধিতায় গড়ে ওঠা এ সংগঠন। নুরুল হক নূর নিজেকে ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের ‘সমন্বয়ক’ দাবি করে শনিবার মধ্যরাতে ফেইসবুকে একটি বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করেন।

সেখানে বলা হয়, গত ২ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের এক যৌথ সভায় কমিটি বিলুপ্তি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। একইসঙ্গে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে’ কমিটি গঠন করতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।

এরপর পাল্টা এক বিজ্ঞপ্তিতে মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, “যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে নুরুল হক নূরের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করার এখতিয়ার নেই। ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের ‘সমন্বয়ক’ পদবি ব্যবহার করায়  নুরের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এই মর্মে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হল।”

রাশেদ বলেন, ২ জুলাইয়ের সেই যৌথ সভায় তিনি নিজে এবং কেন্দ্রীয় কমিটির ‘অনেকে’ উপস্থিত ছিলেন না।

“বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে জানাতে চাই, এমন যৌথ আলোচনা সভায় যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হাসান, মশিউর রহমান, মো. সোহরাব হোসেন, মাহফুজুর রহমান খান, তারিকুল ইসলাম এবং সদস্য আরিফুল ইসলাম সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন না। এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের অনুপস্থিতিতে খোদ কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করার এখতিয়ার কারো নেই।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল হক নূর রোববার বলেন, “কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়কসহ বেশ কয়েকজন নেতার সাংগঠনিক শৃঙ্খভঙ্গের কারণে ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের যৌথ সভায়  এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাছাড়া গত তিন বছর ধরে এই কমিটি দিয়ে চলছে সংগঠন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নতুন নেতৃত্ব বাছাই করতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।

“আমরা এখন আর ছাত্র অধিকার পরিষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নই। মোদীবিরোধী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি আন্দোলন ও বিভিন্ন প্রোগ্রামে  আমি ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছি। তারা আমাকে সেই দায়িত্ব দিয়েছে।”

রাশেদসহ অন্যরা কীভাবে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন জানতে চাইলে নুর বলেন, “ফেইসবুক মেসেঞ্জারে একটি চ্যাট গ্রুপে আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা, বিশেষ করে আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহরাব হোসেন কিছু স্পর্শকাতর কথা বলেছে। যেখানে দলে ভাঙন সৃষ্টি ও পারস্পারিক দ্বন্দ্ব তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল। সেগুলো আবার সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

যৌথসভায় কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতার অনুপস্থিতির বিষয়ে প্রশ্ন করলে নুর বলেন, “আহ্বায়ক ছিল না, ঠিক আছে। কিন্তু অধিকাংশ নেতাই ছিল। আর রাজনৈতিক সংগঠনের সভায় সব নেতা থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। মেজরিটি যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই চূড়ান্ত।”

সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, “এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমরা মনে করছি, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আর চ্যাটিংয়ের জন্য কমিটি বিলুপ্ত করা সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। আমরা আমাদের সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাব। নুরের কথায় বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ করছি।”

সরকারি চাকরির কোটা সংরক্ষণের বিরোধিতায় গড়ে ওঠা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে ২০১৮ সালে আলোচনায় আসে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’। পরে এর নাম পাল্টে ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ’ করা হয়।

২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন এ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর। পরে তাকে মূল ধারার বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে মিলে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের এক শিক্ষার্থী গত বছর ধর্ষণ, ধর্ষণে সহযোগিতা, চরিত্র হনন ও সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগে তিনটি মামলা করেন, যেখানে নুরসহ ছাত্র অধিকার পরিষদের ছয় নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।

মামলা হওয়ার পর গত বছর অগাস্টে রাশেদ খাঁন ও নূরকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে ২২ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে সংগঠনটির একাংশ। সংগঠনের পুরনো নাম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদে’ ফিরে যাওয়ার কথাও তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়।

পুলিশ সম্প্রতি ওই তিন মামলার মধ্যে দুটিতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ও ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগকে সেখানে আসামি করা হলেও নুরের নাম বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker