নরসিংদী

নিজে বিয়ে করলেও প্রেমিক অন্যকে বিয়ে করায় ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড!

এইসএসসি পরীক্ষার্থী ইসরাত জাহান মিম, পড়াশোনার পাশাপাশি নার্স হিসেবে চাকরি করতেন নরসিংদীর একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। তার সহপাঠী মীর মাইনুল হকও চাকরি করতেন স্থানীয় একটি ডেন্টাল চেম্বারে। পড়াশোনা করতে গিয়ে সহপাঠী হওয়ায় তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে দীর্ঘদিনের প্রেম। যদিও উভয়ের পরিবার জানত তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছাড়া আর কিছু নয়। এদিকে গোপনে তারা প্রেম চালিয়ে যাচ্ছিল।

ইতোমধ্যেই প্রেমিকা মিম যে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি করতেন, সেটির মালিক ডাক্তারকে হঠাৎ করেই গোপনে বিয়ে করে ফেলেন। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি জেনে প্রেমিক মাইনুলও অন্য মেয়েকে বিয়ে করে ফেলেন। এতেই বিপত্তি বাধে। কয়েক মাস একসঙ্গে থাকার পর প্রেমিকা মিম ও ওই ডাক্তারের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এদিকে প্রেমিক মাইনুল বিয়ে করে ফেলেছেন জেনে তাকে ভয়ংকরভাবে ঠান্ডামাথায় হত্যার পরিকল্পনা করেন মিম। তার সেই পরিকল্পনা সফলও হয়। ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদীর পলাশে।

নরসিংদীর পলাশে গোপনে অন্য মেয়েকে বিয়ে করায় চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে মীর মাইনুল হক (২৫) নামে এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করেছেন ইসরাত জাহান মিম নামের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এমনটাই জানিয়েছে ঘাতক ওই প্রেমিকা। এর আগে গতকাল শনিবার (১২ ফেব্রয়ারি) বিকেলে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার ঘোড়াশাল বাজারে টুথ অফিস নামের একটি ডেন্টাল চেম্বার থেকে মাইনুলের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পলাশ থানা পুলিশ।

নিহত মীর মাইনুল হক ঘোড়াশাল দক্ষিণ চরপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল ফেলু মীরের ছেলে। সে ঘোড়াশাল মুসাবিন হাকিম ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। পাশাপাশি ঘোড়াশালে টুথ অফিসে সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিল।

পুলিশ জানায়, নিহত মাইনুল হকের সঙ্গে ঘোড়াশাল খিলপাড়া গ্রামের বাদল মিয়ার মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইসরাত জাহান মিমের দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত ৬ ফেব্রুয়ারি মাইনুল হক গোপনে অন্য মেয়েকে বিয়ে করায় সেটি মেনে নিতে পারেননি মিম। এক পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার ( ১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে দেখা করার কথা বলে মোবাইল ফোনে মাইনুলকে বাড়ি থেকে ডেকে আনে মিম। পরে ডেন্টাল অফিসে গিয়ে আগে থেকে কিনে রাখা চেতনানাশক ইঞ্জেকশন মাইনুলের শরীরের পুশ করে। এতে মাইনুল অচেতন হয়ে পড়লে ডেন্টাল ক্লিনিকে ধারালো চাকু দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায় সে।

পালিয়ে যাওয়ার সময় বাহির থেকে চেম্বারের প্রধান দরজা তালাবদ্ধ করে রাখে ঘাতক মিম। এদিকে বিয়ের ৫ দিনের মাথায় স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত মাইনুলের স্ত্রী শ্রাবন্তী বেগম। শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো পরিবার।

নিহতের স্ত্রী শ্রাবন্তী বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভালোবেসে তাদের কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে বিয়ে হয়। মাইনুল ইসরাত জাহান মিমের সাথে একই কলেজে পড়শোনা করত। তার সঙ্গে পূর্বে প্রেমের কোনো সম্পর্ক ছিল কি না, তা জানা ছিল না শ্রাবন্তীর। এ বিষয়ে কখনোই মাইনুল কিছুই বলেনি তাকে।

শ্রাবন্তী বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চেম্বারে যাওয়ার কথা বলে আমার স্বামী মাইনুল বাড়ি থেকে বের হয়। রাত হয়ে গেলে বাড়ি না ফেরায় তার মোবাইল ফোনে কল দিলে তার নম্বর বন্ধ পেয়ে চেম্বারে গিয়ে বাহির থেকে তালাবদ্ধ পাই। পরে এক দিন পার হয়ে যায়। তবুও তার সন্ধান না পাওয়ায় নিখোঁজ উল্লেখ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। শেষ পর্যন্ত স্বামীর মরদেহ ফেরত পেলাম।

নিহতের বড় বোন সুবর্ণা ইয়াসমিন মনি বলেন, মাইনুলের বান্ধবী ইসরাত জাহান মিম পড়াশোনার পাশাপাশি ঘোড়াশাল হেলথ কেয়ার নামে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নার্সের চাকরি করত। শুনেছি গত ৫ মাস আগে সেখানে ডায়গনিস্টিকের মালিকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে তাকে বিয়েও করে। আবার বিয়ের ২ মাস পর তাদের ছাড়াছাড়িও হয়ে যায়। কিন্তু মাইনুলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের বিষয় আমরা কেউই কিছু জানতাম না।

ভাই হত্যার বিচার চেয়ে সুবর্ণা বলেন, আমরা এই হত্যার কঠিন বিচার চাই।

এদিকে ইসরাত জাহান মিমের মামা মেহিন আহম্মেদ বলেন, মিম শিশু বয়স থেকেই ঘোড়াশাল খিলপাড়া গ্রামের নানার বাড়িতে বসবাস করছে। তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হওয়ার পর সে তার নানার কাছেই বড় হচ্ছে। এবার সে এইচএসসি পরীক্ষাও দিয়েছে। পড়াশোর পাশাপাশি একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারে নার্সের চাকরি করত। সেখানে এক ডাক্তারকে গোপনে বিয়ে করেছিল, আবার কয়েকদিন পর তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়িও হয়ে যায়। মাইনুল তার একজন ভালো বন্ধু হিসেবেই জানতাম এর বেশি কিছু জানা ছিল না।

এ বিষয়ে পলাশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াস জানান, নিহতের মরদেহ উদ্ধারের পর তদন্ত নামে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের ৩ ঘণ্টার পর হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ইসরাত জাহান মিমকে গ্রেপ্তার করলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার দায় স্বীকার করে। সে জানায় মাইনুলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেম ছিল। মাইনুল গোপনে অন্য মেয়েকে বিয়ে করে নেওয়ায় এর প্রতিশোধ নিতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে ঘোড়াশালের একটি ফার্মেসি থেকে চেতনানাশক ইনজেকশন নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী মাইনুলের কর্মস্থল টুথ অফিসে গিয়ে সেখানে কথা বলার ছলে ইনজেকশন পুশ করে মাইনুলকে অচেতন করে ফেলে। পরে ওই চেম্বারে রাখা চাকু দিয়ে মাইনুলকে গলা কেটে হত্যা করে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker