ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেছেন, যুক্তরাজ্য ৫০ বছরের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনায় রেখে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি নিবিড় বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার জন্য বাংলাদেশকে একটি ‘প্রকৃত’ স্থান হিসাবে চিহ্নিত করেছে।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশের স্বীকৃতির সুবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে হাইকমিশনার বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা সবসময় নতুন সুযোগ-সুবিধা খোঁজেন।…এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কাহিনী খুবই আকর্ষণীয়।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে ব্যবসা করার জন্য ‘প্রকৃত সুযোগ’ দেখতে পাচ্ছেন। এবকই সাথে লন্ডন ঢাকার সাথে ‘আরো’ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা গড়ে তুলতে আগ্রহী। এখানে দ্রুত প্রবৃদ্ধিসহ অর্থনীতিতে ৩০ মিলিয়ন স্বচ্ছল ভোক্তার একটি সম্প্রসারিত বাজার দেখে যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তাদের আগ্রহ দেখাচ্ছে। এটি এমন একটি বাজার যেখানে তারা (ইউকে কোম্পানি) তাদের পণ্য সরকরাহ করতে চায়, বিশেষ করে উচ্চ মূল্যের পণ্য এবং পরিষেবা, যা উৎপাদনে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো বেশ দক্ষ।
ডিকসন যোগ করেন যে ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা বাড়াতে আগ্রহী। বিশেষ করে তার দেশের মানসম্মত আর্থিক, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা বাংলাদেশে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ডিকসন একই সাথে যোগ করেন যে, ‘আমরা (ইউকে) প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও আরো সম্পৃক্ত হচ্ছি।’
কাইকমিশনার বলেন, ১৯৭১ সালে ‘খুব কঠিন পরিস্থিতিতে শুরু; করা সত্ত্বেও বাংলাদেশের উল্লেখখযোগ্যভাবে স্থিতিশীল, অভিযোজনক্ষম, সৃজনশীল ও ধীমান প্রকৃতি দেশকে ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের দ্বারপ্রান্তেপ্রান্তে নিয়ে এসেছে, যার জন্য এখন এর বর্ধিত বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োাগ (এফডিআই) এবং বৈচিত্রপূর্ণ রফতানি বাস্কেট প্রয়োজন। বাংলাদেশ যে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ প্রস্তাব উপস্থাপন করে তা আরো আকর্ষণীয় করার চেষ্টায় আমরা সরকারের বিভিন্ন অংশের সাথে কাজ করছি।’
কিছু বাধা ও প্রতিবন্ধকতা দূর করে ‘ডুয়িং বিজনেস’ সূচককে আরো ভালো করার জন্য ঢাকার উদ্যোগ আশা করেন।
ডিকসন বলেন, তার দেশ ইতোমধ্যেই আইনি কাঠামো এবং মেধাস্বত্ব সুরক্ষার মতো ক্ষেত্রগুলো মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা দিয়েছে। ব্রিটেনের ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলমান বাণিজ্য সংলাপের অধীনে যুক্তরাজ্য এখন পর্যন্ত এলডিসি উত্তরণের প্রত্যাশিত সময়সীমা ২০২৬ সালের পর পরপর তিন বছর ধরে বাংলাদেশের পণ্যে শুল্কমুক্ত এবং কোটামুক্ত অ্যাক্সেস প্রদান বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি যোগ করেন, সুতরাং, আমরা ইতোমধ্যেই সক্রিয় রয়েছি এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা পরবর্তী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে আরো কিছু করতে পারবো।
হাইকমিশনার বলেন, লন্ডন বর্তমানে বাংলাদেশের সাথে প্রত্যক্ষভাবে এবং ‘আমাদের সম্পৃতা অনুযায়ী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে’ আরো সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত রয়ছে।
ডিকসন অবশ্য বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে না চাইলেও বলেন, ‘আমরা এই বছরের মধ্যে আমাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কোনো না কোনো আকারে আলোচনার অপেক্ষায় রয়েছি, তাই আমরা এটিকে আরো কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতিতে কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা (বাংলাদেশ) সরকারের সাথে সশস্ত্র বাহিনীকে কিভাবে একবিংশ শতাব্দীর উপযুক্ত করা যায় তা নিয়ে কাজ করতে পেরে খুবই আনন্দিত।’
ডিকসন যোগ করেন যে যুক্তরাজ্য পরবর্তী দশকে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রচুর মনোযোগ দেয়ার পরিকল্পনা করেছে এবং বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই এই অঞ্চলে এর ‘খুব শক্তিশালী অংশীদার’ হিসাবে উপস্থিত হয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন গত নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে বলেছেন, বাংলাদেশ ব্রিটেনের কাছ থেকে পাঁচটি নৌ জাহাজ কেনার ব্যাপারে ঢাকা ও লন্ডন নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।
মোমেন ওই সময় বলেন, পাঁচটি জাহাজের মধ্যে তিনটি যুক্তরাজ্য থেকে আমদানি করা হবে এবং বাকিগুলো চট্টগ্রাম ডকইয়ার্ডে নির্মাণ করা হবে।
এ ইস্যুতে সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে হাইকমিশনার বলেন, ‘কিছু ক্রয় (নৌবাহিনীর জাহাজ) খুব দ্রুত হতে পারে।’ তবে তিনি বলেন যে এই বিষয়ে ঢাকা ‘যথামময়ে’ বিস্তারিত ঘোষণা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডিকসন স্মরণ করেন যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রথম দিকের অনেক জাহাজ যুক্তরাজ্যে নির্মিত হয়েছিল। আর যুক্তরাজ্য এখন বাংলাদেশকে উচ্চমানের ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনতে সক্ষম করতে আগ্রহী।
বাংলাদেশ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা উন্নত করার জন্য ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ চালু করেছে। নৌবাহিনীর জন্য, প্রোগ্রামটির লক্ষ্য হলো বাহিনিকে একটি আধুনিক, সুসজ্জিত বাহিনিতে রূপান্তর করা যা মাল্টি-ডোমেইন অপারেশন পরিচালনা করতে সক্ষম হবে।