যশোর

ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালীতে ৩ দিবস উপলক্ষে ২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা

ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালী। তিন দিবস ঘিরে জমে উঠেছে ফুলের বাজার। এতে প্রায় দুই বছর পর হাসি ফুটেছে ফুলচাষিদের মুখে। তারা বলছেন, দিবসগুলো যত কাছে আসবে ফুলের দাম তত বাড়বে। ফলে করোনার ক্ষতি তারা এবার কিছুটা হলেও পুষে নিতে পারবেন। এবার ২০/২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন তারা।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্য মতে, যশোরে ফুলচাষি রয়েছে প্রায় ৬ হাজার। তারা অন্তত ১৫শ’ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ করেন। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ ও নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে অন্তত ১১ ধরনের ফুল শোভা পাচ্ছে। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কলনডালা, চন্দ্র মলি­কাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল সৌরভ ছড়াচ্ছে।

তবে সম্প্রতি শীত প্রধান দেশের ফুল টিউলিপ চাষের মাধ্যমে গদখালীতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে প্রতি বছরই গদখালীর ফুলচাষিরা নতুন জাতের ফুল উপহার দিয়ে থাকেন। এবারের ভালোবাসা দিবসে ফুলপ্রেমীদের জন্য নতুন উপহার টিউলিপ। জানা গেছে, এলাকায় উৎপাদিত ফুল বিক্রির জন্য যশোর রোডের দুই পাশে রয়েছে দেশের বৃহত্তম ফুলের বাজার গদখালী। কাকডাকা ভোর থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরব হয়ে উঠে ফুলের বাজার। গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুলের পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়েছে রয়েছে শত শত ফুলচাষি।
কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ফুলের দাম নিয়ে হাক-ডাকে ব্যস্ত। দুদিন ধরে ফুলের চাহিদা বাড়তি থাকায় পাইকারী ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ফুল কিনছেন। একইসঙ্গে বেশি দাম পাওয়ায় ফুলচাষিরাও বাজারে দ্বিগুণ ফুল এনেছেন।

মানভেদে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা, যা মাসখানেক আগেও বিক্রি হয়েছে মাত্র ১ টাকা থেকে ৩ টাকায়। জারবেরা বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৮ থেকে ১২ টাকায়। এছাড়া গাঁদা ফুল বিক্রি হচ্ছে প্রতি হাজার ৫০০-৭০০ টাকায়। যা আগে ছিল ২০০-৩০০ টাকা।

গদখালী বাজারে ফুল নিয়ে আসা পানিসারা এলাকার তরুণ ফুলচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, অনেক দিন পর বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। ভালোবাসা দিবস ও বসন্তবরণ উপলক্ষে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, মহামারি করোনার কারণে ফুলের বাজার বসলেও এতটা প্রাণবন্ত গত কয়েক মাসে ছিল না।

পটুয়াপাড়া গ্রামের ফুলচাষি রেজাউল ইসলাম চার বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ করেছেন। এখন গোলাপের দাম দ্বিগুণ। এক দিন পরে আরও বাড়বে। সেজন্য ফুল যাতে দেরিতে ফোটে সেজন্য গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখা হয়েছে। এজন্য বাড়তি তিন থেকে চার টাকা খরচ হচ্ছে। ভালবাসা দিবসকে টার্গেট করে সেই ফুল বিক্রি করতে পারলে সব খরচ ওঠে লাভ হবে দ্বিগুণ।

গদখালীতে প্রথমবারের মতো টিউলিপ চাষ করেছেন পানিসারার ইসমাইল হোসেন। তার ৫শতক জমিতে ফুঠেছে বিভিন্ন রঙের ৭ প্রকারের টিউলিপ ফুল। তিনি জানান, জানুয়ারীর শেষ সপ্তাহ থেকে তার জমিতে টিউলিপ ফোটা শুরু করেছে। ভালোবাসা দিবসে এসব টিউলিপ বিক্রি করা হবে। করোনা আর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের রেশ কাটিয়ে উঠে চাষিরা আশার আলো দেখছিলেন। তবে অসময়ের বৃষ্টিতে অনেক ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও বর্তমানে ফুলের যে দাম আগামী তিন দিবস পর্যন্ত থাকলে সব ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, বিভিন্ন কারণে এবার ফেব্রæয়ারীতে ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, তিন দিবসে অন্তত ২০/২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হতে পারে। তিনি আরও জানান, অসময়ের বৃষ্টিতে অনেক ফুল নষ্ট হয়েছে। বর্তমানে সব ধরনের ফুলের দাম দ্বিগুণ। পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস যত কাছে আসবে ফুলের দাম তত বাড়বে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker