কিশোরগঞ্জ

কটিয়াদীর কুড়িখাই মেলা চারশ বছরের ঐতিহ্য

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে শুরু হয়েছে চারশ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলা। এরই মধ্যে এলাকায় চলছে ঈদের আমেজ। শাহ শামসুদ্দিন বুখারির (রহ:) মাজারের ওরশকে ঘিরে করা হয় এ আয়োজন। ধর্মীয় উৎসব হলেও এতে অংশ নেয় সর্বস্তরের মানুষ।

মেলার অন্যতম আকর্ষণ হলো মাছের হাট। মাছ ছাড়াও সাতদিন জুড়ে বেচাকেনা হয় কাঠের আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন ধরণের সামগ্রী। সবমিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য হয় এ মেলায়।

তবে মেলার বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে, শেষ দুদিনের বউ মেলা। ওই দু’দিন এলাকার নারীরা মেলায় গিয়ে কেনাকাটা ও আমোদ প্রমোদ করে। সবকিছুতে থাকবে নারীদের প্রাধান্য। নাইওর আসছে গ্রামের মেয়েরাও।

সোমবার থেকে শুরু হয়েছে এ মেলা। সোমবার থেকেই নেমেছে মানুষের ঢল। জনশ্রুতি রয়েছে ১২২৫ সালে ১২ আউলিয়ার সঙ্গে হযরত শাহ শামসুদ্দিন বুখারি তিন সহচর শাহ নাছির, শাহ কবীর ও শাহ কলন্দরকে সঙ্গে নিয়ে ইসলাম প্রচারের জন্য কটিয়াদী উপজেলার কুড়িখাইয়ে আস্তানা স্থাপন করেন। এ কুড়িখাইয়ে প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ মঙ্গলবার ৭ দিনব্যাপী ওরশ উপলক্ষে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে মাঘ মাসের শেষ সোমবার এ মেলা শুরু হয়।

জানা গেছে, কটিয়াদী নয় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছে মেলায়। মেলা ও ওরস ঘিরে এমন বিচিত্র মেলা ও উৎসব সাধারণত দেখা যায়না। তবে মেলার মাছের হাটে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় মাছ উঠে। এসব মাছ চড়া দামে বিক্রিও হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, মেলার বোয়াল মাছ খেলে এ বছরের জন্য বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাই বোয়াল মাছের দিকে সাধারণ মানুষের চোখ থাকে বেশি। তবে শুধু বোয়াল নয়, সব ধরণের বড় মাছই মেলাতে পাওয়া যায়। মূলত দাওয়াতি জামাইরাই এসব মাছের মূল ক্রেতা। তারা শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে খুশি করতে বড়মাছ কিনেন। কুড়িখাই গ্রামের এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকায় মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন দোকানপাট বসেছে। বিশেষ করে কাঠের আসবাবপত্র, শিশুদের খেলনা, দৈনন্দিন পণ্যসামগ্রী, মেয়েদের সাজগোছের জিনিস থেকে শুরু করে মুড়ি, মিষ্টি, খৈসহ এমন কিছু নেই যা মেলায় উঠেনি। এসবই দরদাম করে কিনে নিয়ে যাচ্ছে ক্রেতারা। মেলাতে শিশুদের জন্যও রাখা হয়েছে পুতুলনাচ, সার্কাস, মোটরসাইকেল রেস নাগরদোলাসহ আরো বেশকিছু আয়োজন। এসব দেখে শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও আনন্দ পাচ্ছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ মেলা।

মেলা কমিটির সম্পাদক মঈনুজ্জামান অপু জানান, মাজার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। মেলার দোকান বরাদ্দ থেকে যে আয় হয় তা ব্যয় করা হয়ে থাকে মাজার ও স্থানীয় মসজিদের উন্নয়ন কাজে। করোনা মহামারির কারণে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানাচ্ছি।

কুড়িখাই মেলা কমিটির সভাপতি উপজেলা নিবার্হী অফিসার জ্যোতিশ্বর পাল জানান, প্রায় চারশ বছর ধরে কুড়িখাই মেলাটি হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলা এখন সর্বজনীন উৎসব ও ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker