জাতীয়

রাষ্ট্রীয় সম্মান না জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার দাফন, হাইকোর্টের উষ্মা

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব শিকদারের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘গার্ড অব অনার’ না জানিয়ে দাফনের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সূর্য সন্তান। এমন একজন সূর্য সন্তানকে গার্ড অব অনার ছাড়া দাফন করে মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করা হয়েছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’

গার্ড অব অনার না জানানোর ব্যর্থতা চ্যালেঞ্জ করা রিট আবেদনের শুনানিতে আজ মঙ্গলবার এ মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। প্রাথমিক শুনানির পর রুল দেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব শিকদারের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘গার্ড অব অনার’ না জানানোর ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং এ ব্যর্থতার দায় নিরূপনে বাজিতপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কেন তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক, জনপ্রশাসন সচিব, কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক, বাজিপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম রাজু।

মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানিয়ে দাফন করা হয় একটি নীতিমালার আওতায়। ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শন আদেশ, ২০২০’ জারি করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের ডিসি বা ইউএনওরা গার্ড অব অনার দেওয়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।

আদেশ জারি করে বলা হয়, নতুন আদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শনের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (www.molwa.gov.bd) প্রকাশিত প্রমাণকের যেকোনো একটিতে নাম থাকতে হবে। প্রমাণকগুলোর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (পদ্মা), মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (মেঘনা), মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (সেক্টর) এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী)। লাল মুক্তিবার্তার মধ্যে রয়েছে লাল মুক্তিবার্তা (চূড়ান্ত লাল বই), লাল মুক্তিবার্তা স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা।

আদেশে বলা হয়, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানাতে হবে। মহানগর ও জেলা সদরে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন। রাষ্ট্রীয় বা জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকলে জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শনের নিয়ম সম্পর্কে বলা হয়েছে, মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার কফিন জাতীয় পতাকা দ্বারা আবৃত করতে হবে। তবে সৎকার বা সমাধিস্থ করার আগে জাতীয় পতাকা খুলে ফেলতে হবে। সরকারের অনুমোদিত প্রতিনিধি কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। অনুমোদিতসংখ্যক পুলিশ বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা সশস্ত্র সালাম প্রদান করবেন এবং বিউগলে করুন সুর বাজাতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গার্ড অব অনার পরিচালনা করবেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় বা জনগুরুত্বপূর্ণ কাজের কারণে থাকতে না পারলে থানার পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

আইনজীবী সুমন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লাল মুক্তিবার্তাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আবদুল মোতালেব শিকদারের নাম রয়েছে। এছাড়া বেসামরিক সনদও আছে। গত ২৮ জানুয়ারি আবদুল মোতালেব শিকদারের মৃত্যুর পরপরই জেলা প্রশাসকসক, ইউএনওসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়নি। এটা অবহেলা না ব্যর্থতা সে বিষয়টি জানতেই আদালত রুল দিয়েছেন। ’

এর আগে, গত ২৮ জানুয়ারি বাজিতপুর পৌরসভার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব শিকদার মারা যান। পরদিন তার দাফনের সময় সবাই উপস্থিত হলেও যাননি উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এ কারণে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব শিকদারকে গার্ড অব অনার ছাড়াই দাফন করা হয়। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষোভও প্রকাশ করেন।

এরপর গত ৩১ জানুয়ারি ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া দাফনের ঘটনা তদন্ত চেয়ে এবং ব্যর্থতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন আবদুল মোতালেব শিকদারের ছেলে রানা শিকদার।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker