কৃষি ও পরিবেশ

পুষ্টি গুনের অনন্য সমাহার বথুয়া শাক

“থাকলে সুস্থ দেহ রয় সুন্দর মন
বথুয়া শাক সুস্থ দেহের উপকরণ “

চোখে পড়লে খেতে লোভ হয়না এমনটি কম মানুষের হয়। গ্রাম-বাংলার খুব পরিচিত একটি শাক হল বথুয়া বা বেথো শাক (বাত্তা শাক)। 

খবর নিয়ে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে এটি কোথাও চাষ করে না। জমিতে আগাছার মত আপনা আপনি জন্ম নেয়, বিভিন্ন সবজি ক্ষেতে এ শাক বিশেষ করে গম ক্ষেতে শিকড় পুতে সবুজের আস্তানা সাজিয়ে বসে থাকে আপন মনবিলাশে।  মাঝে মাঝে বাজারে আঁটি বেঁধেও বিক্রি হয় এটি।

এ শাক দামে খুব সস্তা। বথুয়া শাক মূলত শীতকালে পাওয়া যায়। এ শাকের গড় উচ্চতা ২-৩ ফুট। এটি বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এ গাছের পাতার রং ফ্যাকাসে সবুজ। কান্ডে উঁচু শিড়া ও বেগুনি রেখা দেখা যায়। পাতার উপর প্রলেপ থাকায় জল ধরে না। পাতার নিচেও সাদাটে আস্তরণ থাকে। এ শাকে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, লৌহ, ফসফরাস ও জিংক এবং গুরুত্বপূর্ণ ৮টি অ্যামাইনো এসিড থাকে। 

বিশেষ সূত্রমতে জানা যায়, বথুয়া শাক বিভিন্ন রোগ সাড়াতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এ শাক প্রচুর ভেষজ গুণাগুণ সম্পন্ন। হজমশক্তি উন্নত করে, খিদে বাড়ায়, পেট ব্যাথাও দূর করে। 

ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, জীববিজ্ঞান অনুষদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার এক শিক্ষার্থীর মতানুসারে, বথুয়া শাকের ঔষধি গুন  বহুমাত্রিক। এটি লিভারের সমস্যা, পিত্ত, মলাশয়ের সমস্যাও দূর করে।

জানা যায়, কিডনিতে পাথর হলে বথুয়া শাকের জুস খুব উপকার করে। এক গ্লাস পানিতে বথুয়া শাক ও এক চা চামচ চিনি মিশিয়ে শরবত তৈরি করে টানা দশদিন খেতে হবে। এতে কিডনিতে থাকলে পাথর গলতে শুরু করে।

ত্বকের শ্বেত জাতীয় রোগ নিরাময়েঃ বথুয়া শাক দারুণ কাজ করে। এর জন্য চার কাপ বথুয়া শাক, এক কাপ তিলের তেলের সঙ্গে জ্বাল দিয়ে এক কাপ সমপরিমাণ করুন। প্রতিদিন একবার ক্ষত স্থানে মালিশ করুন। তবে পুরোপুরি এ রোগ সারতে কিছুটা সময় লাগবে।

প্রসাবে জ্বালা পোড়া করলে আধা কেজি বথুয়া শাক বেটে, তিন গ্লাস পানিতে শরবত তৈরি করে ছেঁকে নিন। এরপর এতে তিন চা চামচ জিরা গুঁড়ো, তিন চা চামচ লেবুর রস মিশ্রিত করুন। দিনে তিনবার কয়েকদিন খেলেই এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

গরম জল পড়ে ত্বকের কোনও অংশ পুড়ে গেলে বা ফোসকা পড়লে ওই অংশে বেথো শাক বেটে আলতো করে মাখিয়ে দিন। দেখবেন ত্বকের জ্বালা ভাব দ্রুত কমে যাবে।

মুখে ঘা হলে বেথো শাক চিবিয়ে খেতে পারলে বা হালকা করে রান্না করে খেলে ঘা চটজলদি সেরে যাবে।

হোসেনপুর বাজারের টিন ব্যবসায়ি আবুল কালাম ও সিদলামোড়ের ঔষধ ব্যবসায়ি আকরাম হোসেন জানান, উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিশেষ করে পৌরসভার নতুন বাজার, সিদলার মোড়ে প্রায়শই দেখা যায় বথুয়া শাক বিক্রি করতে। কিন্তু উপজেলায় কোন চাষাবাদের তত্ব মিলেনি,বনে বাদাড় থেকে সংগ্রহ করে আনে বিক্রেতারা।

পিতলগঞ্জ, গড়বিশুদিয়া, বোর্ডের বাজারে বথুয়া শাক বিক্রেতা, আল-আমিন জানান, শীতের সিজন আইলে, বিহালে বন্ধ ঘুইরা ঘুইরা বত্তুয়া হাক তুইল্লা সইন্ধাসম নাইলে সহালে বেইচ্ছা সংসারের লাইগ্গা চাউল সদাই কিইন্না নেই। অহন আর আগের মতন পাইনা।

বিশিষ্ট সাংবাদিক, হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক, আমরার নিউজের প্রধান সম্পাদক জনাব,আশরাফ আহমেদ (সোহাগ) জানান, বথুয়া শাক অত্যন্ত কার্যকরী মানব দেহের রোগ নির্মূলে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতানুসারে, হোসেনপুরে বানিজ্যিক ভাবে বথুয়া চাষ হলে কৃষকদের অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব। 

কৃষি অফিসের তত্বমতে, অবাধে ফসলের জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে শীতকালীন এই বথুয়া শাক। চাষের মাধ্যমে এই শাকের আবাদ করা যেতে পারে। বাংলাদেশের  অনেক এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কৃষক বথুয়া শাকের চাষ করছেন।

উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দীন জানান, বিশ্বনাথপুর, সাহেবের চর, চরকাটিহারীসহ চরাঞ্চলগুলিতে বথুয়া প্রায় সর্বত্রই চোখে পড়ার মত ছিল, কিন্তু বর্তমানে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুন সম্পন্ন এ বথুয়া শাক বিলুপ্তির দিকে।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কৃষকরা বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদন করলে অন্তত স্থানীয় অর্থনীতির ভান্ডার সম্বৃদ্ধ হতো।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker