সরিষাবাড়ী

সরিষাবাড়ীতে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ৫নং পিংনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জয়ের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জাল, প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, সরকারি গাছ চুরি, যমুনা সার কারখানায় অবৈধ সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবসা ও সাধারণ মানুষকে মারধরসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। নানা অনিয়মের দায়ে তার বিরুদ্ধে দুদক ও আদালতে একাধিক মামলা চলমান থাকলেও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বিনা নির্বাচনে টানা ১০ বছর ধরে তিনি বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খন্দকার মোতাহার হোসেন দলীয় সমর্থনে ২০১১ সালের ৬ জুলাই পিংনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই টানা ১০ বছরে টিআর, জিআর, কাবিখা, ইজিপিপি, এলজিএসপিসহ বিভিন্ন প্রকল্পের ভুয়া তালিকা ও নামসর্বস্ব মাস্টাররোল তৈরি এবং স্বাক্ষর/টিপসই জাল করে ব্যাংক থেকে সরকারি টাকা উত্তোলন করে সিংহভাগ হরিলুট করেন। এসব বিষয়ে এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে গত বছরের ১২ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন টাঙ্গাইল সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মো: মোস্তাফিজুর রহমান তাকে নোটিশ প্রদান করেন। যার স্মারক নম্বর ০০.০১.৩৯০০.৬১৫.০১.০১৪.১৮/১২০৬(৫)। একাধিক অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে জরিমানাও দিতে হয়।

এলজিইডি সূত্র জানায়, মোতাহার হোসেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে বারইপটল-ফুলদহেরপাড়া ঈদগাহ মাঠের পাশের ১১টি সরকারি গাছ বিনানুমতিতে কেটে বিক্রি করেন (স্মারক নং এলজিইডি/উ:প্র:/সরিষা/২০১৬/৪৯৫, তাং ১৪/০৭/২০১৬)। ২৪২ ঘনফুট কাঠ ও ৬০ মণ লাকড়ি ২০ লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি ও আত্মসাৎ করায় তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরিষাবাড়ী থানায় একটি জিডি (যার নম্বর ৬২০, তাং ১৭/০৭/২০১৬) দায়ের করেন। এছাড়া এ বিষয়ে আদালতে একটি মামলা হলে চেয়ারম্যান বেশ কিছুদিন হাজতবাস করেন এবং বর্তমানে জামিনে আছেন।

জানা গেছে, মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে যমুনা সার কারখানার অ্যামোনিয়া সিলিন্ডার গ্যাস অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশন টাঙ্গাইল সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক রাজু মো: সারওয়ার হোসেন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মোতাহারের মালিকানাধীন মেসার্স আলমাস এন্টারপ্রাইজের ৫টি তরল সিলিন্ডার হাতে-নাতে আটক করেন।

তার বিরুদ্ধে পিস্তল উঁচিয়ে নীরিহ লোকদের হুমকি ও মারধরের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ফুলদহেরপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ শাহার আলী (৭০) চেয়ারম্যানের কাছে ৬০ হাজার পাওনা টাকা চাইতে গেলে তাকে মারধর করা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিস্বার্থে মাছ চাষের জন্য খালের প্রবাহ বন্ধ করে বাঁধ নির্মাণ ও এলাকার শত শত একর ফসলী জমি নষ্টের অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসকের কাছে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও প্রতিকার মেলেনি। উল্টো তার চাচা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এলপিআর) খন্দকার আতিয়ার রহমানের দাপট দেখান।

সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান মোতাহার ৮নং ওয়ার্ডের নদী ভাঙন দেখিয়ে বাশুরিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনকে বাদী বানিয়ে ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিতের জন্য হাইকোর্টে রিট আবেদন করান (যার নম্বর ১০৯৮২/২০১৭, তাং ২/১১/২০১৫)। এরপর সীমানা জটিলতা দেখিয়ে কাজীপুরের রূপসা গ্রামের মহির উদ্দিনকে বাদী বানিয়ে হাইকোর্টে পৃথক আরেকটি রিট করান (যার নম্বর ৫১৯৯/২০১৭, তাং ১০/০৪/২০১৭)। ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনের কথা থাকলেও হাইকোর্টের আদেশে টানা ১০ বছর তা স্থগিত থাকে। এ সময়ের মধ্যে তিনি নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন পর পিংনা ইউনিয়নে ৬ষ্ঠ ধাপে নির্বাচনী তফশিল ঘোষণা করা হলে খন্দকার মোতাহার হোসেন পুনরায় নৌকার প্রতীক পেতে দলীয় মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন বলে জানা গেছে।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে পিংনা ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জয়ের সাথে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker