টাঙ্গাইল

বিদ্রোহীদের চাপে বেকায়দায় নৌকার প্রার্থীরা

আগামী ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উঠান বৈঠক, পথসভা ও মাইকিংসহ শেষ মুহূর্তের নানা প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিদ্বন্দ্বী সব কয়টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যরা। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে দেউলাবাড়ি ইউনিয়ন ছাড়া বাকি সব ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে রয়েছে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে বিএনপি’র ঘরানার প্রার্থী। বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা যায় বিদ্রোহী চাপে বেকায়দায় আছে নৌকার প্রার্থীরা। নৌকার বিদ্রোহীদের কারণে কোনো কোনো ইউনিয়নে এর সুবিধা পেতে পারে বিএনপি ঘরানার প্রার্থীরা।

এদিকে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন নৌকার বিদ্রোহী ও বিএনপি ঘরানার চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। ভোট নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে শংকা রয়েছে। দেউলাবাড়ি ইউনিয়নের বিএনপি ঘরানার আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও তার কর্মীদের অভিযোগ প্রচারণায় বাধা ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে নৌকার সমর্থকরা। কয়েকটি সমাবেশে হামলা চালিয়ে ভণ্ডুল করার অভিয়োগ করেণ তারা। উল্টো একই অভিযোগ করেছেন নৌকার প্রার্থী সুজাত আলীর সমর্থকরা। পাল্টাপাল্টি একই রকমের অভিযোগ করেছেন দিঘলকান্দি, দিগড়, লোকেরপাড়াসহ অন্যান ইউনিয়নের নৌকার বিদ্রোহী ও বিএনপি ঘরানার প্রার্থীরা। তারা এনিয়ে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন জানান।

দেউলাবাড়ি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৪ জন। এরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী সুজাত আলী খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম খান, ইসলামী আন্দোলনের মো: সোলায়মান এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: মোতাহের। এখানে নৌকার বিদ্রোহী কোনো প্রার্থী নেই। ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায় চার জন প্রার্থী থাকলেও এই ইউনিয়নে সরাসরি লড়াই হবে নৌকার প্রার্থী সুজাত আলীর সাথে বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আনারস প্রতীকের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম খানের।

ঘাটাইল ইউনিয়নে ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৭ জন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো: হায়দর আলী, ইসলামী আন্দোলনের গোলাম ছরোয়ার, বিএনপি নেতা ফিরোজুর রহমান মিয়া, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন মিজানুর রহমান হিরা, আ: আজিজ, নাজমুল হক ও আশরাফুল ইসলাম।

ইউনিয়নের সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে ভোটের লড়াইয়ে থাকবেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান হায়দার আলী, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আনারস প্রতীকের মিজানুর রহমান হিরা, চশমা প্রতীকের আ: আজিজ। আলোচনায় আছেন বিএনপি নেতা সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমানও।

লোকেপাড়া ইউনিয়নে ৬ চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শরিফ হোসেন, সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা হায়দার আলী তালুকদার ও তার ভাই আব্দুল বাসেত তালুকদার, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মাঠে আছেন শহিদুল হক মিলন, জহিরুল ইসলাম বাবু, মো: শাহ আলম। সাধারণ ভোটারদের অভিমত এখানে তিন বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় আছেন নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ শরীফ হোসেন।

দিঘলকান্দি ইউনিয়নে ৪ চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো: ইকবাল হোসেন খান, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল ইসলাম খান গুডু, রেজাউল করিম মটু এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো: মিজানুর রহমান। এই ইউনিয়নে বিএনপি ঘরানার কোনো প্রার্থী নেই।

সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা, যায় এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল খানের বিপরীতে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থানে আছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের রেজাউল করিম মটু।

আনেহলা ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বী ৫ চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান তালুকদার মো: শাহজাহান, বিএনপি নেতা সাবেক চেয়ারম্যন শফিউর রহমান মুক্তা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাইফুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির এবং জামাত নেতা খন্দকার মো: আব্দুর রহিম।

সরেজমিন ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই ইউনিয়নে মূল লড়াইয়ে থাকবেন নৌকার প্রার্থী তালুকদার মো: শাহজাহানের চশমা প্রতীকের প্রার্থী বিএনপি নেতা শফিউর রহমান মুক্তা।

দিগড় ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৫ জন। এরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো: জামাল হোসেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এস এম সাইফুল ইসলাম, ফারুক হোসেন ফনি, বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ মামুন এবং সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মো: আব্দুস সাত্তার। বিদ্রোহীদের কারণে এখানে নৌকার প্রার্থী চাপে আছেন। ভোটারদের অভিমত এই ইউনিয়নে কার গলায় বিজয়ের মালা উঠবে তা বলা মুশকিল।

দেওপাড়া ইউনিয়নে সব চেয়ে বেশি ৯ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বাহাদুর আলম খান। এ ছাড়া সকল স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ ঘরানার। এরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান মাঈন উদ্দিন তালুকদার, রুহুল আমিন হেপলু, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, দেওয়ান মোহাম্মদ মারুফ শামীম, আনোয়ার হোসেন তালুকদার, মজিবর রহমান, আলমগীর খান ও আনোয়ার হোসেন। এখানে নৌকার প্রার্থীর অবস্থান নাজুক।

ভোটাররা জানান, এই ইউনিয়নে শেষ পর্যন্ত চশমা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক, টেলিফোন প্রতীকে শামীম দেওয়ান ও আনারস প্রতীকের রুহুল আমিন হেপলু ভোটের মাঠে লড়াইয়ে থাকবেন।

উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলেন জানা যায়, একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় নৌকার প্রার্থীরা চাপে আছে। সবাই মিলে কাজ না করলে নৌকাকে জয়ী করা কঠিন হবে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংগ্রামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, বিদ্রোহীদের কারণে নৌকার প্রার্থীরা কিছুটা বেকায়দায় আছেন। তবে আমি আশাবাদী নেতাকর্মীরা ভেদাভেদ ভুলে নৌকার পক্ষে কাজ করবে এবং নৌকার প্রার্থীরাই বিজয়ী হবে।

সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker