কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বোনকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় উত্যক্তকারী বখাটেদের বাঁশের আঘাতে মো. আলম মিয়া (২৩) নামে অনার্স পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হওয়ার একদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত মো: আলম মিয়া কুলিয়ারচর উপজেলার গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের ভাটির জগতচর গ্রামের খুর্শিদ মিয়ার ছেলে।
সে কটিয়াদী সরকারি কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। নিহত আলমের পিতা খুর্শিদ মিয়া বড়চাড়া বাজারের পাশে পুড়ি সিংগারার দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে আলম তাঁর মা-বাবা ও দুই বোনসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উত্তর লক্ষ্মীপুর সিদ্দির মোড়ে অনুষ্ঠিত আলোচিত বক্তা গিয়াস উদ্দিন তাহেরীর ওয়াজ শুনতে যায়।
ওয়াজ শেষে তারা বাড়ি ফেরার পথে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে লক্ষ্মীপুর পূর্বপাড়া গ্রামের আসাদ মিয়ার বাড়ির সামনে পাকা রাস্তায় আসলে আলমের ছোট বোন চুমকিকে উদ্দেশ্য করে কয়েকজন বখাটে ইভটিজিং ও অশালীন ইঙ্গিত করতে থাকে। চুমকির বড় ভাই আলম তৎক্ষণাৎ এর প্রতিবাদ করে।
এ সময় বখাটেরা আলমের উপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে বখাটেরা আলমের মাথায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করলে, আলম গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ সুযোগে বখাটেরা পালিয়ে যায়।
এ সময় গুরুতর আহত আলমকে পরিবার ও স্থানীয়রা উদ্ধার করে বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ভর্তি করার পর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎক সিটি স্ক্যান শেষে রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করার পর সেখানে চিকিৎসাধীণ অবস্থায় শনিবার (১১ ডিসেম্বর) ভোরে আলম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
আলমের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে এবং এলাকাবাসী তাৎক্ষণিকভাবে বখাটদের ৭২ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার দাবিতে আগরপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক সড়কে নারী শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
এই ঘটনায় কুলিয়ারচর থানায় শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে নিহত আলমের বড় বোন জামাই মো: সুজন মিয়া বাদী হয়ে পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর পূর্ব পাড়া গ্রামের কামাল হোসেনের পুত্র মো: রকি মিয়া (২১) ও একই গ্রামের আঙ্গুর মিয়ার পুত্র শাওন (২০) এর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৩/৪ জনকে আসামি করে কুলিয়ারচর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ প্রসঙ্গে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, এ ঘটনায় নিহতের ভগ্নিপতি সুজন মিয়া বাদী হয়ে শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে থানায় মামলা করেছেন।
আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সাঁড়াশি অভিযান চলছে। যেকোনো মূল্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।