প্রেমের টানে ত্যাগ করলেন দেশ, বাংলাদেশে এসে ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন পাকিস্তানি বোসরা পারভীন। কৌতুহল বসত দেখতে আসে অনেকে।
গত ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিশোরগঞ্জ সদরের মারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। নির্বাচিত হওয়ার পর বোসরাকে একনজর দেখতে বাড়িতে ভীড় জমতে থাকে আশপাশের লোকজন। তার সঙ্গে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন অনেকে। বর্তমানে দেখার কৌতুহল নিয়ে অনেকেই ছুটে আসে বোসরার কাছে।
নির্বাচনে মাইক প্রতীকে বোসরা পারভীন পেয়েছেন ২ হাজার ৮৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বই প্রতীকে আকলিমা খাতুন পান ১ হাজার ৭২০ ভোট।
বোসরা পারভীন জানান, ১৯৮৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পরিবারে তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় তিনি। ২০০২ সালে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম কাতিয়ারচর এলাকার রতন মিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানে বিয়ে হয় তার।
২০১০ সালে তিনি পাঁচ সন্তানকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে চলে আসেন কিশোরগঞ্জে। এর দুই বছর পর স্বামী রতন মারা গেলে সন্তানদের নিয়ে থেকে যান স্বামীর বসতভিটায়। ২০১৭ সালে ভোটার হন তিনি।
বোসরা জানান, ২০১২ সালে রতন মিয়া মারা যাওয়ার পর পাকিস্তান থেকে তার স্বজনরা বহুবার ফোন করেছেন বাংলাদেশ থেকে চলে যেতে। কিন্তু স্বামীর ভিটা ছেড়ে যাননি তিনি। অভাবের সংসার চালাতে বেগ পেতে হয় তাকে। কাজ করেছেন বিভিন্ন বাসাবাড়িতে। সর্বশেষ শহরের নতুন জেলখানার মোড়ে একটি চায়ের দোকান দিয়ে বসেন। সবার সঙ্গে চলতে চলতে এ দেশের ভাষাও শেখেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে অনেকেই তাকে প্রার্থী হতে বলেন। বিষয়টি তিনি তার শ্বশুরকে জানান। তিনি তাতে অসম্মতি জানান। এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজনের উৎসাহ দেখে রাজি হন তার শ্বশুর। এরপর থেকে তিনটি ওয়ার্ডের লোকজন নিজেদের টাকায় তহবিল গঠন করে তার নির্বাচনের ব্যয় ভার বহন করেন। এমনকি বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেন তাকে।
তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ ভিনদেশী একটা মানুষকে এত সহজে আপন করে নিয়ে যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, তিনি আজীবন তাদের কাছে ঋণী হয়ে থাকবেন। এলাকার বাসিন্দারা তার বিপদে-আপদে যেভাবে সহযোগীতা করেছেন, তিনিও একইভাবে তাদের পাশে দাঁড়াতে চান।
বোসরার দেবরের স্ত্রী চায়না আক্তার বলেন, ‘২০১০ সালে পাঁচ সন্তানকে নিয়ে পাকিস্তানি ভাবি যখন এ দেশে আসেন, তখন আমরা ভেবেছিলাম উনি এখানে থাকবেন না। সে ধারণা তিনি পাল্টে দিলেন, থেকে গেলেন এ দেশেই।’
বোসরার দেবর হেদায়েত উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনে ভাবি প্রার্থী হওয়ার পর থেকে তাকে একনজর দেখতে সব সময় লোকজনের ভীড় লেগে থাকত। কোনো জায়গায় নির্বাচনী প্রচারণায় বের হলে তাকে দেখার জন্য লোকজন এগিয়ে আসত। অন্য প্রার্থীরা ডেকে ডেকে যে পরিমাণ লোক জড়ো করতেন, ভাবি প্রচারণায় বের হলে দ্বিগুণ লোক জড়ো হতো। ভোটে জয়ের পর ভিড় বেড়েছে।
কিশোরগঞ্জ নতুন জেলখানা মোড়ের একজন ব্যবসায়ী শাহ আলম জানান, অনেক মানুষজন বোসরা পারভীন কে দেখতে আসে প্রতিনিয়ত।