পাবনা

প্রার্থী চাচা-ভাতিজা, আনারসের ভারে নুয়ে পড়েছে নৌকা!

আগামী ১১ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার), পাবনার সুজানগর উপজেলার ১০ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি ইউনিয়নেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের মনোপুত প্রার্থী না হওয়ার অনেক চেষ্টা করেও কর্মীদের নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামানো যায়নি। তবে বহিষ্কারের ভয়ে পদধারী নেতারা প্রকাশ্যে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলেও ভিতরে ভিতরে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর আনারসের ভারে নুয়ে পড়েছে দলীয় প্রতীক নৌকা। এই কারণেই নির্বাচনের প্রচারণার শেষ মুহূর্তে দেখা দিয়েছে তীব্র উত্তেজনা, হামলা, অগ্নিসংযোগ, গুলি বর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপের মতো ঘটনা।

হামলায় শিকার হয়েছে দলীয় নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থীর আনারস প্রতীকের সমর্থক, কর্মী। ভাঙচুর করা হয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রচার অফিস। গুলিবিদ্ধ হয়ে এবং লাঠির আঘাতে আহত হয়েছেন অন্তত উভয় পক্ষের ২৫ কর্মী ও সমর্থকরা। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের এখনো ভয় দুটো ভয় নৌকা প্রতীকের পক্ষে বিদ্রোহীদের উপর বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলা এবং পুলিশি হয়রানি। এই দুটো বিষয় না ঘটলে প্রতিটি ইউনিয়ন থেকেই বিদ্রোহী প্রার্থীদের সুনিশ্চিত বিজয় হবে।

সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন মাধ্যমের নিকট এসব দাবি করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। গতকাল সোমবার সুজানগর উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে ঘুরে ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, অনেকেই নানা সময় বিতর্কিত কাজ ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। কেন্দ্র থেকে তারাই আবার চেয়ারম্যান পদে দলীয় নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন। দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতারা দলের নিকট থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেও বঞ্চিত হয়েছেন। এই কারণে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের চাপে প্রতিটি ইউনিয়নই থেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে। এমনকি উপজেলার দুই ইউনিয়নে এবার আপন চাচা ও ভাতিজা পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে দুলাই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম শাজাহান। এবারও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। চেয়ারম্যানের বিপক্ষে আনারস প্রতীক নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান সাইদ। সম্পর্কে তারা আপন চাচা ও ভাতিজা।

আহমদপুর ইউনিয়নেও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আপন চাচা ও ভাতিজা। চাচা বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ হয়েছেন দলীয় নৌকা প্রতীকে প্রার্থী। আর ভাতিজা হিরা মিয়া আনারস প্রতীক নিয়ে হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী।

সুজানগরের বনখোলা বাজারে সংবাদ সম্মেলনে মানিকহাটা ইউনিয়নে আনারস প্রতিকে বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্বাস আলী মল্লিক অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে তাঁর নিশ্চিত জয় আর নৌকা প্রার্থীর পরাজয় হবে। এই কারণে গত রবিবার রাতে নৌকার প্রার্থী শফিউল ইসলাম শফি’র পক্ষে কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান উজ্জলের নেতৃত্বে শতাধিক মোটর সাইকেল ও ৭/৮টি হাইচ মাইক্রোবাস যোগে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা এসে তাঁর নির্বাচনী প্রচার অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। নেতাকর্মীদের উপর গুলি বর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করেছে। এতে তার পক্ষের ১৫ জন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে, বোমার ও লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন।

দুলাই ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী সাইদুর রহমান সাইদ জানান, তারা আওয়ামী রাজনৈতিক পরিবার। তার চাচা বর্তমান চেয়ারম্যান নানা রকম দুর্নীতির যুক্ত হয়ে পারিবারিকভাবে আমাদের লজ্জিত করেছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করেছেন। বর্তমানে নেতাকর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। এই কারণে তিনি নেতাকর্মীদের দাবি ও সমর্থনেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। বিজয় তার সুনিশ্চিত। এই কারণে বহিরাগত ও চরমপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসী এনে ইউনিয়নে ত্রাসের সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও চাচার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন এই প্রার্থী।

নৌকা প্রতীকের বর্তমান সিরাজুল ইসলাম শাহজাহান জানান, মনোনয়ন না পেয়ে সাইদুর রহমান দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে। নির্বাচনের আগে থেকেই সাইদ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে। নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করতে বিদ্রোহী প্রার্থী ভাতিজা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে বলেও দাবি করেছেন চাচা।

আহমদপুর ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী হিরা মিয়া জানান, নৌকার প্রার্থী তার চাচা কামাল আহমেদ বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তার প্রচার কাজে বাঁধা দেওয়াচ্ছেন। নেতাকর্মী সবাই তার সঙ্গে এই জন্য বিজয় তারই হবে বলেও দাবি এই প্রার্থীর।

এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কামাল আহমেদ অভিযোগ করে জানান, তার ভাতিজা বিদ্রোহী প্রার্থী হিরা মিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, প্রতিটি সংঘর্ষের ঘটনাতেই পক্ষগুলো পরস্পরকে দোষারোপ করছে। পুলিশ তদন্ত করে দেখছি। এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বহিরাগত সন্ত্রাসীদের বিষয়েও অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।

পাবনা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মহিবুল ইসলাম খান জানান, সুষ্ঠু পরিবেশে নিরপেক্ষভাবে ভোট গ্রহণ ও প্রদানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোরতা পালন করা হবে। ভোটের মাঠে কোনো রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker