নওগাঁ

অবশেষে পুলিশের নেতৃত্বে দখলমুক্ত হলো নওগাঁর জনগুরুত্বপূর্ণ জেলখানা সড়ক

নবাগত পুলিশ সুপারের সাহসী পদক্ষেপে স্বস্তিতে নওগাঁবাসী; দীর্ঘদিনের যানজট ও অবৈধ গ্যারেজ উচ্ছেদ; প্রশংসায় ভাসছে জেলা পুলিশ

নওগাঁ শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক হচ্ছে বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলখানা সড়কটি। এই সড়কটির দুই পাশে রয়েছে সরকারি শিশু এতিমখানা, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, দুদক অফিস ও জেলখানাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও অসংখ্য কারখানা। এছাড়া নওগাঁ শহর থেকে বদলগাছী উপজেলা হয়ে ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে যাতায়াতের একমাত্র আন্ত: আঞ্চলিক প্রধান সড়ক এটি। এক সময় এই সড়কটি অনেক সরু ও খারাপ ছিলো। সব সময় যানজট লেগেই থাকতো।
নওগাঁবাসীকে যানজট মুক্ত আধুনিক সড়ক ব্যবস্থার সুবিধায় যুক্ত করতে সরকার এই জনগুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়কটি প্রশস্তকরণের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করে। কিন্তুদুই পাশে বাস, ট্রাক, রোলারসহ বিভিন্ন যানবাহন মেরামতের কারখানা থাকায় সড়ক প্রশস্তকরণের পরও কতিপয় ব্যক্তিরা পুরো সড়কটি অবৈধ ভাবে যানবাহন রাখার গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহার করে আসতো। বিশেষ করে সড়কের উভয় পাশের মাঝখানের জায়গা অবৈধ ভাবে দখল করে রাখার কারণে ঘটতো নানা দুর্ঘটনা। যার কারণে সড়কটি প্রশস্ত ও আধুনিকায়ন করলেও বছরের পর বছর সেই সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিলো নওগাঁবাসী।
এই বিষয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা নানা কারণে পুরো সড়ককে অবৈধ দখলের হাত থেকে মুক্ত করতে পারেনি। এছাড়া নওগাঁর সংবাদকর্মীরা ধারাবাহিক ভাবে সংবাদও প্রকাশ করে আসছিলো। তুবও কোন ভালো ফল পাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি নওগাঁর নবাগত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম ব্যস্ততম এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিকে অবৈধ দখলের হাত থেকে মুক্ত করে  প্রশংসায় ভাসছেন। বর্তমানে পুরো সড়কটিই ব্যবহার করা যাচ্ছে। সড়কের কোন পাশে নেই অবৈধ ভাবে গ্যারেজ করে রাখা কোন যানবাহন। এমন দু:সাধ্য কাজ সাধন করায় নওগাঁর সচেতনমহল পুলিশ সুপারকে সাধুবাদ জানিয়েছে। এমন কাজের যেন ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে সেই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পুলিশ সুপারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন নওগাঁর সর্বস্তরের মানুষ।
বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা মো: আব্দুস সামাদ জানান বর্তমানে জেলখানা সড়কটি তাদের কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। যে সড়কটি আগে অবৈধ যানবাহনের অঘোষিত গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহার হতো, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোন মতে চলাচল করতে হতো। মাঝেমধ্যেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটতো। আজ সেই সড়কটি পুরোপুরি ফাঁকা। এখন প্রতিটি যানবাহন স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারছে। সড়কের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। এমন অবস্থা যেন সব সময় থাকে তবেই আধুনিক সড়কের যে সুবিধা সেই সুবিধার পুরোটাই পথচারীসহ নওগাঁবাসী উপভোগ করতে পারবেন। তাই এই সড়কসহ শহরের সকল গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবৈধ দখলের হাত থেকে মুক্ত করে নিরাপদ সড়কে পরিণত করতে সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এই বাসিন্দা।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন কতিপয় ব্যক্তিদের অবৈধ দখলের কারণে কোটি টাকা দিয়ে নির্মাণ করা সড়কের সুবিধা মানুষ পাবে না এটা হতে পারে না। যেহেতু বালুডাঙ্গা এলাকা হচ্ছে নওগাঁ শহরের প্রবেশদ্বার তাই এই স্থানের সকল সড়কই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বে কে কি করেছে আর করেনি সেটা নিয়ে ভাববার সময় নেই। তিনি নওগাঁ শহরের যানজট নিরশনে নওগাঁ জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই তিনি নওগাঁ শহরকে যানজট মুক্ত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রমিক এবং মালিকের সাথে বৈঠক করে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এছাড়া শহরের রাস্তায় পার্কিং না করার জন্য সচেতনমূলক মাইকিং এর মাধ্যমে প্রচার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে বালুডাঙ্গা থেকে বরুনকান্দি পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে পার্কিং না করার জন্য সংশ্লিষ্ট যানবাহনের মালিকদের অবগত করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় জেলা ট্রাফিক পুলিশ নওগাঁ শহরের গুরুত্বপূর্ণ বালুডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে বরুনকান্দি পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে অবৈধভাবে পার্কিং করা যানবাহনগুলো ইতিমধ্যে অপসারণ করেছে। অপসারণ কাজের সময় শুধুমাত্র একটি রোড রোলার ছাড়া সকলেই রাস্তা থেকে তাদের গাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। পরবর্তীতে রেকারের মাধ্যমে রোড রোলারটিকে টেনে পুলিশ লাইনে নেয়া হয়েছে। নওগাঁ শহরের যানজট নিরশনে নওগাঁ জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সর্বোচ্চ সচেষ্ট রয়েছে।
তিনি আরো বলেন নওগাঁ শহরকে চলাচলের জন্য যানজট মুক্ত ও নিরাপদ করতে জেলা ট্রাফিক পুলিশ বদ্ধ পরিকর। তাই তিনি এমন কঠিন কাজটি সহজেই বাস্তবায়ন করতে সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন। শহরের স্থানীয় বাসিন্দাসহ সকল স্তরের মানুষের সার্বিক সহযোগিতা ছাড়া কোন কিছুই সম্ভব নয়। তাই তিনি নওগাঁ শহরবাসীসহ পুরো জেলাবাসীকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার, আইন প্রয়োগে পুলিশকে সহযোগিতা করা, যেখানে সেখানে পার্কিং বন্ধ করাসহ দোকানের মালামাল রাস্তার উপর না রাখতে সকলের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রতিটি মানুষের একটু একটু সহযোগিতা নওগাঁ শহরের যানজট নিরসনে একটু হলেও ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আগামীতেও এই ধরণের কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।

Author

মো: খালেদ বিন ফিরোজ, নওগাঁ প্রতিনিধি

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ৩০ মে থেকে মিশন ৯০ নিউজে নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker