নওগাঁ

অতিরিক্ত মুনাফার প্রলোভনে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, মূলহোতা গ্রেফতার

‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের এনজিও-এর পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু ঢাকায় আটক; প্রাথমিক তদন্তে ৮০০ ভুক্তভোগীর ৬০০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের তথ্য

অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎকারী একটি প্রতারক চক্রের মূলহোতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে আত্মগোপন অবস্থায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম মো. নাজিম উদ্দিন তনু (৩৭)। তিনি নওগাঁ জেলার জগৎসিংহপুর এলাকার বাসিন্দা এবং ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের এনজিওটির পরিচালক হিসেবে পরিচিত।

সিআইডির এলআইসি ইউনিট আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত করে এ অভিযান পরিচালনা করে।

মামলার বাদী তার এজাহারে উল্লেখ করেন, নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায় অবস্থিত ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ (রেজি. নং রাজ–৩৭০)–এ তিনি ও আরও বহু গ্রাহক সঞ্চয় জমা, মাসিক ডিপিএস ও এককালীন ঋণ গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেন। অনেক গ্রাহক আলাদাভাবে এককালীন আমানত হিসেবেও অর্থ জমা দেন।

গ্রাহকদের বলা হতো—প্রতি ১ লাখ টাকার বিপরীতে মাসে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ পাওয়া যাবে। বাদীর নিজের আমানত ছিল ২০ লাখ টাকা। তার দাবি, প্রতিষ্ঠানে মোট প্রায় ১৫০ কোটি টাকা আমানত রেখেছিলেন বিভিন্ন গ্রাহক।

তদন্তে জানা গেছে, প্রথমদিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করা হতো, যা দেখে সাধারণ মানুষ প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আস্থা পোষণ করে এবং বিনিয়োগে আগ্রহী হয়। বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশই ছিলেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। তবে ২০২৪ সালের আগস্টের পর থেকে লেনদেনে অস্বচ্ছতা দেখা দিতে থাকে। বহু গ্রাহক তাদের জমাকৃত অর্থ বা ঋণের টাকার সঠিক হিসাব পাচ্ছিলেন না এবং উত্তোলনের চেষ্টায় বাধার সম্মুখীন হচ্ছিলেন।

অভিযোগ করার পর পরিচালক নাজিম উদ্দিন কিছু সময়ের আশ্বাস দিলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। গত বছরের নভেম্বর মাসে গ্রাহকরা প্রতিষ্ঠানটির অফিসে অর্থ ফেরতের দাবি জানাতে গেলে কর্তৃপক্ষ টালবাহানা শুরু করে এবং একপর্যায়ে জানিয়ে দেয়-তাদের কোনো অর্থ ফেরত দেওয়া হবে না। এরপর গ্রাহকদের জোর করে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়।

ঘটনার পর বাদী নওগাঁ সদর থানায় ১২ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মামলা (নং–২০) দায়ের করেন। এতে পেনাল কোডের ৪০৬/৪২০ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। এখন পর্যন্ত প্রাথমিক তদন্তে ৮০০-র বেশি ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

মামলাটি সিআইডির নওগাঁ জেলা ইউনিট তদন্ত করছে। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে এখন পর্যন্ত নাজিম উদ্দিন তনুসহ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চক্রের অন্যান্য সদস্যদের শনাক্তকরণ, সম্পূর্ণ অর্থপ্রবাহ উদঘাটন এবং আইনগত পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে সিআইডির তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Author

মো: খালেদ বিন ফিরোজ, নওগাঁ প্রতিনিধি

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ৩০ মে থেকে মিশন ৯০ নিউজে নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker