টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম পেল জিআই পণ্য স্বীকৃতি
‘মিষ্টির রাজা’ তার জন্মস্থানেই অস্তিত্ব হারানোর পথে, তবে বিশ্বজুড়ে কদর বাড়ছে
‘চমচম, টমটম, শাড়ি, এই তিনে টাঙ্গাইলের বাড়ি’—এই প্রবাদকে আরও একবার সত্য প্রমাণ করে টাঙ্গাইলের বিখ্যাত পোড়াবাড়ির চমচম ভৌগলিক নিদের্শক (জিআই) পণ্য হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকারের ভৌগলিক নিদের্শক ইউনিট (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন ২০১৩ অনুযায়ী এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
জিআই স্বীকৃতি, কিন্তু জন্মস্থানে সংকট
পোড়াবাড়ির চমচম একসময় ‘মিষ্টির রাজা’ হিসেবে দেশে-বিদেশে খ্যাতি লাভ করলেও, বর্তমানে এর জন্মস্থান পোড়াবাড়ি গ্রামেই এটি অস্তিত্ব হারানোর দ্বারপ্রান্তে। কালের বিবর্তনে প্রতিযোগিতা ও অতি মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ীর কারণে এখন মাত্র ৮-১০টি বাড়িতে চমচম তৈরি হয়। বিখ্যাত কয়েকটি পরিবার ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন।
তবে টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনী বাজারের ‘মিষ্টি পট্টী’তে এখনও এই প্রসিদ্ধ চমচম পাওয়া যায়। এই পাঁচআনী বাজারকে পরিচিত করে তুলতে ত্রিশ দশকের শেষের দিকে আসামের রামেন্দ্র ঠাকুর ও তীর্থবাসী ঠাকুর মিষ্টি তৈরি ও ব্যবসা শুরু করেছিলেন। বর্তমানে জয় কালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, গোপাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও গৌর ঘোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এই শিল্পের প্রতিনিধিত্ব করছে।
পোড়াবাড়ির অতীত ও বর্তমান
- অবস্থান: পোড়াবাড়ি গ্রামটি ধলেশ্বরীর শাখা নদী এ্যালনজানীর বামতীর ঘেঁষে সদর উপজেলার একটি ছোট্ট গ্রাম।
- নামকরণের ইতিহাস: ১৬০৮ থেকে ১৬১৩ সালের মধ্যে চারাবাড়ী গ্রামের দক্ষিণ অংশে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ওই এলাকাকে পোড়াবাড়ি বলা হত।
- দুধের সংকট: একসময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ মণ দুধ বিক্রি হলেও এখন তা কমে ১০০ মণে দাঁড়িয়েছে। বেশি দুধের আশায় স্থানীয় খামারিরা এখন বিদেশি গরু পালন করায় দুধের সেই ঐতিহ্যবাহী স্বাদও কমছে।
দেশ-বিদেশে খ্যাতি
১৯৬০ সালে টাঙ্গাইল মহকুমার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পর চমচমের সুখ্যাতি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ বহু বিখ্যাত ব্যক্তির প্রিয় খাদ্য ছিল এই চমচম।
বর্তমানে এই চমচম এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, যেমন ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, চায়না, আমেরিকা, ইংল্যান্ড এবং কানাডাসহ মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরে যাচ্ছে।