১৯১২ সালের ২৮ জুলাই নড়াইলের কালিয়া থানার বেন্দা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন কমল দাশগুপ্ত। ছোট থেকে কখনওই আর্থিক অনটন তাঁকে বুঝতে হয়নি। কবি নজরুল ইসলাম ছাড়া তাঁর সবথেকে বেশি গানের সুর হয়তো কমল দাশগুপ্তই দিয়েছিলেন। অন্তত ৪০০টি নজরুল গীতি এবং অসংখ্য আধুনিক ও সিনেমার গানে সুর দিয়েছেন প্রথম জীবনে। প্রতি মাসে গড়ে ৪৫টি করে গানের সুর দেওয়ার রেকর্ড তাঁর। শুধু এইচ এম ভি-র জন্যই সুর দিয়েছেন ৭ হাজারের বেশি গান।
একসময় যিনি প্রতি মাসে গড়ে ৪৫টি করে গানের সুর দিতেন, যিনি ১৯৪৬ সালে ৩৭ হাজার টাকা আয়কর দিয়েছেন, যিনি গাড়ি ছাড়া পা রাখেননি কলকাতার রাস্তায়; সেই কমল দাশগুপ্ত অবশেষে ঢাকায় খুললেন এক মুদিখানা। গীতিকার মোহিনী চৌধুরী লিখেছিলেন ‘ভালোবাসা মোরে ভিখারি করেছে’। সেই একটি পঙক্তিই যেন সুরকারের জীবনের শিরোনাম হয়ে থেকে গেল।
সালটা ১৯৫৫। প্রায় এক যুগ পর দেখা হলো দুজনের – কমল দাশগুপ্ত এবং ফিরোজা বেগম। দুজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন, কমলের বয়স তখন ৪৩। দুজনের ধর্ম আলাদা ছিল এবং ফিরোজার থেকে তিনি ১৮ বছরের বড়ো ছিলেন। বিবাহের ঠিক ৪ বছরের মাথায় ধর্ম পরিবর্তন করলেন কমল। তখন তাঁর পরিচয় হল কামাল।
কেরিয়ারের ঊর্ধ্বগামী গ্রাফ একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকে, কারণ নাথ ব্যাঙ্ক ভরাডুবি হওয়ায় সমস্ত সঞ্চয়ও খুইয়েছেন। ১৯৬৭ সালে সপরিবারে সীমানার ওপারে পাড়ি দিলেন পূর্ব পাকিস্তানে। কিন্তু ঢাকা শহরেও কোনো অভ্যর্থনা পেলেন না তিনি। পরবর্তী জীবন কাটতে লাগল অভাব আর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে। সুরকারের জীবন চালানোই কঠিন হয়ে পড়লে তিনি ‘পথিকার’ নামে একটি মুদি দোকানের সামনে এসে রীতিমতো অবাক করেছিলেন এক প্রতিবেদককে।
তবে শেষ পর্যন্ত আবার কাজের মধ্যে ফিরেছিলেন কমল দাশগুপ্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মতিতে জন্ম নিল ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস, যার দায়িত্ব নিলেন কমল দাশগুপ্ত নিজেই। এছাড়া স্ত্রী ফিরোজার নামে বাংলা আকাদেমি থেকে প্রকাশ করলেন ‘নজরুল গীতিমালা’। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ১৯৭৪ সালের ২০ জুলাই এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন তিনি।