বদলগাছীর ভূমি কর্মকর্তা রাসেলের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুর-মথুরাপুর-পাহাড়পুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা রাসেল হোসেনের বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত সেবা প্রদানের জন্য ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, ঘুষ ছাড়া তিনি কোনো কাজ করেন না এবং মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সরকারি খাজনাও কমিয়ে দেন।
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুর-মথুরাপুর-পাহাড়পুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জমি সংক্রান্ত সেবা পেতে হলে দিতে হচ্ছে ঘুষ। অভিযোগ, ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা রাসেল হোসেন ঘুষের বিনিময়ে জমি সংক্রান্ত সব সেবা দিয়ে থাকেন।
সরকারের এই দপ্তরটিতে ঘুষের রাজত্ব গড়ে তুলেছেন রাসেল। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সরকারের খাজনাও কমিয়ে দেন এই কর্মকর্তা।
অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা এর আগে নওগাঁ সদরের দুবলহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত ছিলেন। সেখানেও অল্পদিনের মাথায় গড়ে তুলেছিলেন ঘুষের সর্গরাজ্য। অফিসের বাইরে বাড়িতে বসেই টাকার বিনিময়ে দিতেন ভূমি সেবা।
দায়িত্ব পাবার কিছুদিনের মাথায় তিনটি ইউনিয়নের এই একটি মাত্র অফিস যেন ঘুষ বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ঘুষের বিনিময়ে ৭০ হাজার টাকার খাজনা এক লাফে নেমে হয়ে যায় ৫ হাজারে। আবার কারো ২৮ হাজার টাকার খাজনা হয় ৫৭১ টাকায়। এভাবেই ঘুষ নিয়ে কাজ করে দেন ওই কর্মকর্তা। এমনকি ঘুষের বিনিময়ে ৪ লাখ টাকার খাজনা দুই হাজার টাকায় নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ঘুষ নিয়ে সেবা দেওয়ায় এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সোহেল রানা সেখানে তদন্ত করতে গেলে এক জটলার সৃষ্টি হয়। ভুক্তভোগীদের তোপের মুখে পড়েন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা রাসেল হোসেন। ঘটনাটি গত প্রায় এক মাস আগে উপজেলার ওই ভূমি অফিস এলাকায় ঘটে। অপরদিকে তদন্তের প্রায় মাস খানেক হলেও রাসেল হোসেনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ প্রকাশ করলেন ভুক্তভোগীরা।
অনুসন্ধানকালে সেবাপ্রত্যাশীদের অভিযোগ- জমির খাজনা বাবদ, খারিজের প্রতিবেদন-প্রস্তাব, নামজারির রেকর্ড সংশোধনসহ সব ক্ষেত্রে টাকা ছাড়া মিলছে না সেবা। খাজনার পরিমাণ দেখে চুক্তি করা হয় টাকা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রথমে খাজনা রশিদে টাকার পরিমাণ বেশী দেখান ওই সহকারী কর্মকর্তা। এরপর ঘুষ দিলে খাজনার পরিমাণ হয়ে যায় শতকের ঘরে। চাহিদা মত ঘুষ দিলেই মেলে কাজ, না দিলেই সেবাপ্রত্যাশীদের মাসের পর মাস হয়রানিতে পড়তে হয়।
জমির খাজনা দিতে গিয়েছিলেন উজালপুর গ্রামের ফাতেমা বেগম নামের এক নারী। প্রথমে তার কাছে চাওয়া হয়েছিল ২৮ হাজার টাকা। এরপর ২০ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে তার খাজনা হয়ে যায় ৫৭২ টাকা। রশিদ পেয়ে চোখ তার কপালে। ভুক্তভোগী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমি জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য ভূমি অফিসে চেক তুলতে গেছিলাম। আমার কাছে ২৮ হাজার টাকা চাওয়ায় আমি দিতে পারিনি। পরে ২০ হাজার টাকা নিয়ে ৫৭২ টাকা চেকে তুলে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি এই ৫৭২ টাকার চেক দেওয়ায় বাকি টাকা ফেরৎ চাই এবং বলি আমি গরীব মানুষ স্যার। তখন তিনি বলেছেন, ‘তাই কম নিচ্ছি আমরা, টাকা ফেরত দিব কিভাবে। আমি আমার টাকা ফেরৎ চাই।’
মথুরাপুর ইউপির তৌহিদ হোসেন জানান, ‘আমার কাছে তিন খতিয়ান মিলে ৪ লাখ টাকার রশিদ দেখায়। পরে এক মহুরীকে নিয়ে গিয়ে ২ লাখ টাকা ঘুষ দিলে ২ হাজার ২০০ টাকার খাজনা রশিদ দেয়। ওই কর্মকর্তা এখনও কিভাবে আছে ওই অফিসে, ওর তো চাকরি থাকার কথা নয়। সেদিন এডিসি স্যার সময় স্বল্পতার কারণে আমাদের সকলের কথা শুনতে পারেননি। প্রায় ৪০-৫০ জন ভুক্তভোগী তাদের অভিযোগ নিয়ে আসছিলো।’
আরেক জন দুর্গাপুর গ্রামের সুজাউল। তিনি শ্বশুরের জমির খাজনা দিতে গিয়েছিলেন। প্রথমে তিনটা খতিয়ান মিলে ৬৯ হাজার ৪১৪ টাকার রশিদ দেখায় তহশিলদার রাসেল হোসেন। এরপর ৩০ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে নেমে যায় ৫ হাজার ৮৪২ টাকায়। রশিদ পেয়ে তারও চোখ কপালে।
অভিযোগের বিষয় ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা রাসেল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বিষয়ে কে কি অভিযোগ করেছে আমার জানা নাই। আমি কারো কাছে কোন টাকা নেইনি।’ অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘একটা কুচক্র মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ দিয়েছে। তার প্রেক্ষিতে স্যার এসেছিলেন তদন্ত করতে। তদন্ত শেষ হলে বলা যাবে, তার আগে আর কিছু বলতে চাই না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান ছনি বলেন, ‘রাসেল হোসেনের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের পর জানা যাবে।’ এছাড়া ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরো একাধিক সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে দেখবো এবং সঠিক হলে সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহেল রানা মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরজমিনে গিয়েছিলাম। তদন্ত চলমান আছে। এছাড়া অন্যান্য ভুক্তভোগীর অভিযোগের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।’