জাতীয়
সংবিধানের তফসিলে থাকবে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পলায়নের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পলায়নের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ঘোষণা করেন যে, ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এই ঘোষণাপত্রটি সন্নিবেশিত থাকবে। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেলে সাড়ে ৫টার দিকে তিনি এই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
ড. ইউনূস ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’-তে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় তুলে ধরেছেন:
- মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা।
- স্বাধীনতার পর: ১৯৭২ সালের সংবিধানের দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের ফলে আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয় এবং বাকশালের নামে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করে।
- গণ-অভ্যুত্থান ও স্বৈরশাসন: ৯০-এর গণ-অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী শাসন। এই সময়ে সংবিধানের অবৈধ পরিবর্তন, দুর্নীতি, গুম, খুন এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়।
- জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর দমন-পীড়ন ও বর্বর হত্যাকাণ্ডের ফলে এই আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ফ্যাসিবাদী বাহিনীর হাতে প্রায় এক হাজার মানুষ নিহত হয় এবং সামরিক বাহিনী জনগণের লড়াইকে সমর্থন দেয়।
- শেখ হাসিনার পলায়ন ও অন্তর্বর্তী সরকার: ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে জনগণের তীব্র আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এরপর অবৈধ দ্বাদশ সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
ঘোষণাপত্রে জনগণের বিভিন্ন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে:
- ফ্যাসিবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ: জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।
- অপরাধের বিচার: বিগত ১৬ বছরে সংঘটিত গুম, খুন, গণহত্যা ও সকল ধরনের নির্যাতন-নিপীড়নের দ্রুত ও উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করা হবে।
- শহীদদের স্বীকৃতি: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সকল শহীদকে জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করা হবে। শহীদ পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে প্রয়োজনীয় সব আইনি সুরক্ষা দেওয়া হবে।
- নতুন সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা: জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার করা হবে। এর মাধ্যমে আইনের শাসন, মানবাধিকার, দুর্নীতিমুক্ত, শোষণহীন ও বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্রটি প্রণয়ন করা হয়েছে।